ঢাকা ১১:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আশুলিয়ায় পরিত্যক্ত সরকারি পুকুরে মাছ চাষ করে অসহায়দের মাঝে বিতরণ

ঢাকার আশুলিয়ায় জামগড়া এলাকায় গাজির দরগা পুকুর নামে পরিচিত একটি পরিত্যক্ত সরকারি পুকুরে মাছ চাষ করে সেই মাছ গরীব অসহায়দের মাঝে বিতরণ করে অনন্য এক নজির স্থাপন করেছেন স্থানীয় মীর বংশের মৃত মজিবুল্লাহ মীরের ছেলে দেলোয়ার মীর।

 

শুক্রবার (৩ জানুয়ারী ২৪) সকাল দশটার দিকে গাজির দরগা পুকুর পাড়ে এলাকার জনসাধারণ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে এই মাছ উৎসবের আয়োজন করা হয়। আগেরদিন ঘোষনা দেওয়ার কারণে শুক্রবার সকালে পুকুরের কাছে এলাকার গরিব অসহায় মানুষ সহ স্থানীয় শত শত জনসাধারণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পরে সবার উপস্থিতিতে পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা হয়।

 

এসময় দেলোয়ার মীর উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, এই পরিত্যক্ত সরকারি পুকুরটি বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে আমাদের পরিবার সরকারি অনুমতিক্রমে বিভিন্ন ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার জনসাধারণ নিয়ে গড়া একটি সমিতির ব্যবস্থাপনায় এবং আমার তত্ত্বাবধানে এখানে রেনু মাছ ছাড়া হয় এবং সেই মাছ বড় হলে এলাকার সবার উপস্থিতিতে পুকুরে জাল টেনে মাছ ধরে গরিব অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়। মাঝে মাঝে কিছু মাছ বিক্রি করে দরগা পুকুরপাড়ে একটি কবরস্থান আছে সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করা সহ এলাকার মসজিদ মাদ্রাসায় দান করা হয়। এবং পুনরায় রেনুমাছ সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়া হয়। এভাবেই এলাকার জনসাধারণকে সাথে নিয়ে সমাজ সেবামূলক এই কাজটি করা হচ্ছিল । এতে স্থানীয় জনসাধারণসহ সরকারি কর্তৃপক্ষ সব সময় আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছিল ।

 

তিনি আরও বলেন, কিন্তু বিগত ১৫ বছর ধরে এলাকার গরিব অসহায় মানুষগুলা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে । স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোর করে দখল করে এই পুকুরটি ভোগ দখল করতে ছিল।আমরা বারবার বিভিন্ন সরকারি মহল ও দফতরের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলে এবং লিখিত অভিযোগ করে দখলের বিষয়টি জানালেও কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে নাই। এবং সরকারি সম্পত্তি (জলাশয়) বেদখলের কোন ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয় নাই।

 

এতে বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে পুকুরটির দখলদার আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকার গরিব অসহায় মানুষ, জনসাধারণসহ আমাদের পরিবারের কোনো সদস্যই পুকুরের আশেপাশে ঘেষতে পারত না। পুকুরটির পুরো আর্থিক সুবিধাই নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে এবং ছাত্র জনতার নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন এই পুকুরটি আবার জনসাধারণের মাঝে ফিরে এসেছে। যতদিন না পর্যন্ত সরকার এই পুকুরটিকে কোন ইজারা না দিচ্ছে, ততদিন আমরা এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আগের মতই গরিব অসহায়দের প্রয়োজনে এবং সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার্থে কাজ করে যেতে চাই। আর এই কারণে ৫ আগস্টের পরে আমরা এলাকাবাসিকে সাথে নিয়ে এই পুকুরে মাছ ছেড়েছিলাম এবং এখন সেই মাছ ধরে গরিব অসহায় জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করেছি ।

 

দেলোয়ার মীর বলেন, যদিও আগের মত এখনও আমাকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা-মামলা করে বিভিন্ন রকমের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। যেন আমরা পুকুরের আশেপাশে না আসি ।দেলোয়ার মীর বলেন, আমরা এলাকার জনসাধারণের স্বার্থে এই পুকুরটিকে সরকারি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছি এবং সেই লক্ষ্যে আমরা সরকারি নিয়মের কয়েক ধাপের কাজ সম্পুর্ন করেছি। তিনি আরও জানান, আমরা আশা করবো সরকার যেন কাউকে ইজারা দেওয়ার আগে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দেয়। এবং পুকুরটি কাদের দ্বারা প্রকৃতভাবে রক্ষণাবেক্ষণসহ স্থানীয় গরিব অসহায় জনসাধারণের উপকারে আসবে।

 

এসময় জামগড়া দরগা পুকুরে মাছ নিতে আসা কামাল নামের একজন জানান, আমি এখানে প্রায় ১৮/১৯ বছর ধরে বসবাস করি। বিগত ১৫ বছর আগেও এই পুকুরের মাছ ধরলেই আমরা ফ্রিতে এসে মাছ নিয়ে যেতাম। কিন্তু এই ১৫ বছর পুকুরে আশেপাশে আমরা কখনো আসতে পারিনি ফ্রিতে মাছ নেওয়ার জন্য। আবার এখন আবার অনেক দিন পর এই পুকুরে মাছ ধরছে জানতে পেরে এখানে মাছ নিতে এসেছি। আমরা চাই এভাবেই হোক সবকিছু। চল্লিশোর্ধ্ব আসমা খাতুন জানান, অনেক দিন পর এই পুকুরে ফ্রিতে মাছ পেয়েছি। অনেক খুশি আমরা সবাই। গরীব মানুষ সবসময় মাছ কিনে খেতে পারি না। এভাবে মাঝে মাঝে এই পুকুর ফ্রীতে মাছ পেলে আমাদের মত মানুষের জন্য খুব উপকার হয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করলেন আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সালিভান, আলোচনায় কী?

আশুলিয়ায় পরিত্যক্ত সরকারি পুকুরে মাছ চাষ করে অসহায়দের মাঝে বিতরণ

আপডেট সময় ০২:১৬:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

ঢাকার আশুলিয়ায় জামগড়া এলাকায় গাজির দরগা পুকুর নামে পরিচিত একটি পরিত্যক্ত সরকারি পুকুরে মাছ চাষ করে সেই মাছ গরীব অসহায়দের মাঝে বিতরণ করে অনন্য এক নজির স্থাপন করেছেন স্থানীয় মীর বংশের মৃত মজিবুল্লাহ মীরের ছেলে দেলোয়ার মীর।

 

শুক্রবার (৩ জানুয়ারী ২৪) সকাল দশটার দিকে গাজির দরগা পুকুর পাড়ে এলাকার জনসাধারণ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে এই মাছ উৎসবের আয়োজন করা হয়। আগেরদিন ঘোষনা দেওয়ার কারণে শুক্রবার সকালে পুকুরের কাছে এলাকার গরিব অসহায় মানুষ সহ স্থানীয় শত শত জনসাধারণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পরে সবার উপস্থিতিতে পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা হয়।

 

এসময় দেলোয়ার মীর উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, এই পরিত্যক্ত সরকারি পুকুরটি বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে আমাদের পরিবার সরকারি অনুমতিক্রমে বিভিন্ন ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার জনসাধারণ নিয়ে গড়া একটি সমিতির ব্যবস্থাপনায় এবং আমার তত্ত্বাবধানে এখানে রেনু মাছ ছাড়া হয় এবং সেই মাছ বড় হলে এলাকার সবার উপস্থিতিতে পুকুরে জাল টেনে মাছ ধরে গরিব অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়। মাঝে মাঝে কিছু মাছ বিক্রি করে দরগা পুকুরপাড়ে একটি কবরস্থান আছে সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করা সহ এলাকার মসজিদ মাদ্রাসায় দান করা হয়। এবং পুনরায় রেনুমাছ সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়া হয়। এভাবেই এলাকার জনসাধারণকে সাথে নিয়ে সমাজ সেবামূলক এই কাজটি করা হচ্ছিল । এতে স্থানীয় জনসাধারণসহ সরকারি কর্তৃপক্ষ সব সময় আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছিল ।

 

তিনি আরও বলেন, কিন্তু বিগত ১৫ বছর ধরে এলাকার গরিব অসহায় মানুষগুলা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে । স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোর করে দখল করে এই পুকুরটি ভোগ দখল করতে ছিল।আমরা বারবার বিভিন্ন সরকারি মহল ও দফতরের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলে এবং লিখিত অভিযোগ করে দখলের বিষয়টি জানালেও কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে নাই। এবং সরকারি সম্পত্তি (জলাশয়) বেদখলের কোন ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয় নাই।

 

এতে বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে পুকুরটির দখলদার আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকার গরিব অসহায় মানুষ, জনসাধারণসহ আমাদের পরিবারের কোনো সদস্যই পুকুরের আশেপাশে ঘেষতে পারত না। পুকুরটির পুরো আর্থিক সুবিধাই নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে এবং ছাত্র জনতার নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন এই পুকুরটি আবার জনসাধারণের মাঝে ফিরে এসেছে। যতদিন না পর্যন্ত সরকার এই পুকুরটিকে কোন ইজারা না দিচ্ছে, ততদিন আমরা এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আগের মতই গরিব অসহায়দের প্রয়োজনে এবং সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার্থে কাজ করে যেতে চাই। আর এই কারণে ৫ আগস্টের পরে আমরা এলাকাবাসিকে সাথে নিয়ে এই পুকুরে মাছ ছেড়েছিলাম এবং এখন সেই মাছ ধরে গরিব অসহায় জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করেছি ।

 

দেলোয়ার মীর বলেন, যদিও আগের মত এখনও আমাকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা-মামলা করে বিভিন্ন রকমের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। যেন আমরা পুকুরের আশেপাশে না আসি ।দেলোয়ার মীর বলেন, আমরা এলাকার জনসাধারণের স্বার্থে এই পুকুরটিকে সরকারি ইজারা নেওয়ার চেষ্টা করছি এবং সেই লক্ষ্যে আমরা সরকারি নিয়মের কয়েক ধাপের কাজ সম্পুর্ন করেছি। তিনি আরও জানান, আমরা আশা করবো সরকার যেন কাউকে ইজারা দেওয়ার আগে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে দেয়। এবং পুকুরটি কাদের দ্বারা প্রকৃতভাবে রক্ষণাবেক্ষণসহ স্থানীয় গরিব অসহায় জনসাধারণের উপকারে আসবে।

 

এসময় জামগড়া দরগা পুকুরে মাছ নিতে আসা কামাল নামের একজন জানান, আমি এখানে প্রায় ১৮/১৯ বছর ধরে বসবাস করি। বিগত ১৫ বছর আগেও এই পুকুরের মাছ ধরলেই আমরা ফ্রিতে এসে মাছ নিয়ে যেতাম। কিন্তু এই ১৫ বছর পুকুরে আশেপাশে আমরা কখনো আসতে পারিনি ফ্রিতে মাছ নেওয়ার জন্য। আবার এখন আবার অনেক দিন পর এই পুকুরে মাছ ধরছে জানতে পেরে এখানে মাছ নিতে এসেছি। আমরা চাই এভাবেই হোক সবকিছু। চল্লিশোর্ধ্ব আসমা খাতুন জানান, অনেক দিন পর এই পুকুরে ফ্রিতে মাছ পেয়েছি। অনেক খুশি আমরা সবাই। গরীব মানুষ সবসময় মাছ কিনে খেতে পারি না। এভাবে মাঝে মাঝে এই পুকুর ফ্রীতে মাছ পেলে আমাদের মত মানুষের জন্য খুব উপকার হয়।