ঢাকা ১০:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বটিয়াঘাটা উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখীর তেল

খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার ৭ ইউনিয়নে এক সময় তিল চাষে বাংলাদেশের মধ্যে বিখ্যাত ছিলো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতি বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে তিল ফসলের চাষ নেই বললেই চলে। ফলে এই সময় অধিকাংশ জমি পতিত থাকতো। সম্প্রতিকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে সূর্যমুখী,তরমুজ ও ভূট্টা চাষে ঝুঁকেছে বটিয়াঘাটার কৃষকেরা। ফলে কৃষকদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্য সচেতনতা। উপজেলার জলমা ইউনিয়নের শুড়িখালী গ্রামের কৃষকেরা সূর্যমুখী উৎপাদন করে তেল ভাঙ্গিয়ে নিজেরা খাচ্ছেন পাশাপাশি বিক্রয় করছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। শুড়িখালী গ্রামের কৃষক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন,আমাদের এলাকায় দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে দুই একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছিলাম। উৎপাদিত সূর্যমুখী আমিসহ অন্য কৃষকরা ২৬ শ টাকা মন দরে দুই ট্রাক বিক্রয় করেছি সাতক্ষীরায় টাটা কোম্পানির কাছে। বাকী সূর্যমুখী প্রতি মাসে ভাঙ্গিয়ে নিজেরা তেল হিসেবে খাচ্ছি ও বিক্রয় করছি। আমার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত তেল ক্রয় করছে মোঃ কিশোর আহমেদ, দিঘলিয়ার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, রুপসার মোঃ নজরুল ইসলাম,জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মহাদেব সানা,অঞ্জন বিশ্বাস,অসিম মন্ডল,উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ পলাশ কুমার দাশ, ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রধান সহ আরও অনেকে তেল ক্রয় করে কিনে খাচ্ছে। বটিয়াঘাটা সুর্যমুখী চাষি কৃষকেরা এই পর্যন্ত কমপক্ষে ৭শ লিটার তেল বিক্রয় করেছে । উপজেলার হোগলবুনিয়া গ্রামের কুমারেশ বালার মিলে সূর্যমুখী তেল ভাঙ্গিয়ে বিক্রয় করেন কৃষকেরা। সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবানন্দ রায় বলেন, প্রণোদনার আওতায় কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করে সূর্যমুখী চাষাবাদ করালাম। প্রথম দিকে এর তেল খাওয়ার লোক কম ছিলো। এখন সূর্যমুখীর তেলের কদর দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশের ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমছে এবং আগামীতে এর চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন,সূর্যমুখী লবন সহনশীল হওয়ায় খুলনা অঞ্চল তথা বটিয়াঘাটা উপজেলায় এর আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। বটিয়াঘাটা উপজেলায় গত ২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৮০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। কৃষকদের তেল উৎপাদনের সুব্যবস্থা করতে পারলে এর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

সার্বিক বিষয় জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ অফিসার মহাদেব সানা বলেন, সূর্যমুখীর তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এই তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরল মুক্ত। এই তেলে রয়েছে সেলেনিয়াম যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। সূর্যমুখীর তেলে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম যা মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এই তেলে রয়েছে ওমেগা ৩ ও ৬ ফ্যাটি এসিড যা মানুষকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। দাঁত ও ত্বক সুস্থ,সবল রাখে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তন্নী বলেন,সূর্যমুখী তেলে রয়েছে- ভিটামিন,মিনারেল ও ফ্যাটি অ্যাসিড- যা ত্বকের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যে উপকারী। সূর্যমুখী তেলে- ভিটামিন এ, সি, ডি ও ই এবং মিনারেল। যা কপার, জিঙ্ক ও আয়রন- যাহা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে সৌন্দর্য বাড়াতে সহায়ক হয়। এ তেল ত্বককে আর্দ্র রাখে। তাই সকলের উচিত সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কাওরাইদ রেলওয়ে স্টেশনে যমুনা এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

বটিয়াঘাটা উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখীর তেল

আপডেট সময় ০৮:২০:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার ৭ ইউনিয়নে এক সময় তিল চাষে বাংলাদেশের মধ্যে বিখ্যাত ছিলো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতি বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে তিল ফসলের চাষ নেই বললেই চলে। ফলে এই সময় অধিকাংশ জমি পতিত থাকতো। সম্প্রতিকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে সূর্যমুখী,তরমুজ ও ভূট্টা চাষে ঝুঁকেছে বটিয়াঘাটার কৃষকেরা। ফলে কৃষকদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্য সচেতনতা। উপজেলার জলমা ইউনিয়নের শুড়িখালী গ্রামের কৃষকেরা সূর্যমুখী উৎপাদন করে তেল ভাঙ্গিয়ে নিজেরা খাচ্ছেন পাশাপাশি বিক্রয় করছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। শুড়িখালী গ্রামের কৃষক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন,আমাদের এলাকায় দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে দুই একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছিলাম। উৎপাদিত সূর্যমুখী আমিসহ অন্য কৃষকরা ২৬ শ টাকা মন দরে দুই ট্রাক বিক্রয় করেছি সাতক্ষীরায় টাটা কোম্পানির কাছে। বাকী সূর্যমুখী প্রতি মাসে ভাঙ্গিয়ে নিজেরা তেল হিসেবে খাচ্ছি ও বিক্রয় করছি। আমার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত তেল ক্রয় করছে মোঃ কিশোর আহমেদ, দিঘলিয়ার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, রুপসার মোঃ নজরুল ইসলাম,জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মহাদেব সানা,অঞ্জন বিশ্বাস,অসিম মন্ডল,উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ পলাশ কুমার দাশ, ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রধান সহ আরও অনেকে তেল ক্রয় করে কিনে খাচ্ছে। বটিয়াঘাটা সুর্যমুখী চাষি কৃষকেরা এই পর্যন্ত কমপক্ষে ৭শ লিটার তেল বিক্রয় করেছে । উপজেলার হোগলবুনিয়া গ্রামের কুমারেশ বালার মিলে সূর্যমুখী তেল ভাঙ্গিয়ে বিক্রয় করেন কৃষকেরা। সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবানন্দ রায় বলেন, প্রণোদনার আওতায় কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করে সূর্যমুখী চাষাবাদ করালাম। প্রথম দিকে এর তেল খাওয়ার লোক কম ছিলো। এখন সূর্যমুখীর তেলের কদর দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশের ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমছে এবং আগামীতে এর চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন,সূর্যমুখী লবন সহনশীল হওয়ায় খুলনা অঞ্চল তথা বটিয়াঘাটা উপজেলায় এর আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। বটিয়াঘাটা উপজেলায় গত ২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৮০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। কৃষকদের তেল উৎপাদনের সুব্যবস্থা করতে পারলে এর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

সার্বিক বিষয় জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ অফিসার মহাদেব সানা বলেন, সূর্যমুখীর তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এই তেল ক্ষতিকর কোলেস্টেরল মুক্ত। এই তেলে রয়েছে সেলেনিয়াম যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। সূর্যমুখীর তেলে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম যা মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এই তেলে রয়েছে ওমেগা ৩ ও ৬ ফ্যাটি এসিড যা মানুষকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। দাঁত ও ত্বক সুস্থ,সবল রাখে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা তন্নী বলেন,সূর্যমুখী তেলে রয়েছে- ভিটামিন,মিনারেল ও ফ্যাটি অ্যাসিড- যা ত্বকের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যে উপকারী। সূর্যমুখী তেলে- ভিটামিন এ, সি, ডি ও ই এবং মিনারেল। যা কপার, জিঙ্ক ও আয়রন- যাহা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে সৌন্দর্য বাড়াতে সহায়ক হয়। এ তেল ত্বককে আর্দ্র রাখে। তাই সকলের উচিত সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করা।