ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকায় অবস্থিত ইউফোরিয়া লি: এর শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টায় বেঙ্গল গ্রুপের মালিকাধীন এই ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড গার্মেন্টসের শ্রমিকদের সঙ্গে এ সংঘর্ষ হয়।
শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বকেয়া বেতনসহ ২৩দফা দাবিতে সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা চলছিল। ৮ই সেপ্টেম্বর রবিবার ছিল শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার দিন।ছয়তালা বিশিষ্ট এই কারখানাটিতে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করে । রবিবার সকালে শ্রমিকরা কাজের যোগ দেয়ার ঘন্টা দুয়েক পর জানতে পারেন আজও তাদের বেতন দেওয়া নাও হতে পারে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মালিক পক্ষ থেকে বলা হয় আজই বেতন দেওয়া হবে। সবাইকে কাছে মনোযোগ দিতে বলে ।এরপর সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও বেতন না পেয়ে হতাশ হয়।পরবর্তীতে শ্রমিকরা পরামর্শ করে বিকেল ৫টার কিছু আগে তাদের একজন প্রতিনিধি সিনিয়র অপারেটর দেলোয়ার হোসেন কে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে কর্তৃপক্ষের অফিসে পাঠান, শ্রমিকদের বেতনের বিষয়ে কথা বলার জন্য। এখানে শ্রমিকরা জানান, আমরা বেশি শ্রমিক যাইনি কারণ অফিসে যাওয়ার পরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হৈচৈ হতে পারে ।তাই যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়িয়ে থাকার জন্য আমরা একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছি । এবং অপারেটর দেলোয়ার হোসেন অফিসে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান আজ আমাদের বেতন দেয়া হবে কিনা? কিন্তু কর্তৃপক্ষ দেলোয়ার হোসেনকে এ বিষয়ে কোন জবাব না দিয়ে খারাপ আচরণ করেন এবং তাকে মারতে মারতে অফিস থেকে বের করে দেয়।মুহূর্তের মধ্যে এই খবর শ্রমিকদের মধ্যে পৌঁছে গেলে সকল শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
এবং সকল শ্রমিক একত্রিত হয়ে কর্মবিরতি ঘোষণা করে তাদের পূর্বের ঘোষিত ২৩ দফা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে । পরবর্তীতে কারখানা কর্তৃপক্ষ সকল শ্রমিকদের মোবাইল একাউন্টে বেতন দেয়া হয়েছে বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু শ্রমিকরা নিজ একাউন্ট চেক করে দেখতে পায় তাদের মাত্র ১৫০০ টাকা করে বেতন দেয়া হয়েছে । এতে শ্রমিকরা আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং পূর্ণ কর্মবিরতি পালনের ঘোষনা দিয়ে দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয় ইউফোরিয়া গার্মেন্টসের শ্রমিকরা।
পরে সন্ধ্যায় ঐ গার্মেন্টসের মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। খবর পেয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা কারখানার এলাকায় গেলে তাদের সঙ্গেও শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। এসময় শ্রমিকরা র্যাবের একটি গাড়িতে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িও ভাঙচুর করে। পরে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে গোটা এলাকা থমথমে বিরাজ করছে।
আরো জানা যায়, শ্রমিক এবং যৌথ বাহিনীর মাঝে সংঘর্ষ হলে এতে লাঠি চার্জ করলে তখন তাদের মাঝে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। শ্রমিকরা আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা নেন বলে জানা যায়।
এতে ইউফোরিয়া লি : এর পাশে সেলুন ব্যাবসায়ী বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হয়ে আশুলিয়া নারী শিশু হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। ইউফোরিয়া লি : এর শ্রমিকরা এবং যৌথ বাহিনী সংঘর্ষের সময় পাশের শামস গার্মেন্টসের রেজাউল খান নামের অপারেটর কে পুলিশ বুকে আঘাত করলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং তাৎক্ষণিক ভাবে তাকে ইউনিক স্ট্যান্ডে আশরাফ আলেয়া হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কথা বলে আরো জানা যায়, রাতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ আহত রোগী তাদের কাছে চিকিৎসা নেয়ার জন্য এসেছিলেন কিন্তু তাদের কাছে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকায় সবাইকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এদিকে আর এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ,আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মালিকপক্ষের লোকজন যৌথভাবে কারখানার ভিতরে অবস্থানরত সকল শ্রমিকদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় অনেকে ভয়ে দিগ্বিদিক হয়ে ছুটে পালিয়েছে। আবার অনেকে আহত অবস্থায় কারখানার ভিতরেই ছিল। প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা ধরে শ্রমিকদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা চলেছে। এরপর সংঘর্ষ কিছুটা বন্ধ হওয়ার পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে কারখানার ভিতরে আহত ব্যক্তিরা বের হতে পারছিলেন না আবার বাইরে থেকেও কোন শ্রমিক আহত শ্রমিকদেরকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাবে সেখানেও প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে ।
অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, সংঘর্ষের এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ৫জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক খানকে পুলিশ লাইন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কনস্টেবল তৌহিদুল ও নাজমুল ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের নিজ নিজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সাভার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব ৪)-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মাহমুদ খান বলেন, ‘আন্দোলনরত শ্রমিকদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তারা উত্তেজিত হয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। পরে তাদেরকে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এখন গোটা এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এবং যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে।