আবুল কালাম আজাদ:- রেল চলাচল শুরু হচ্ছে ১২আগস্ট সোমবার থেকে চলাচল করবে ট্রেন,তবে প্রথম দিন চলবে মালবাহী ট্রেন,১৩ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে চলাচল শুরু হবে স্বল্প দূরত্বের মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন এবং আগামী ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে আন্তনগর ট্রেন চলাচল করবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। রেলওয়ে সূত্র বলছে, আজ রোববার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব অংশ নিয়েছিলেন এবং রেল চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ মাসুদ (অ,দা) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে রেল চলাচল শুরুর বিষয়ে নির্দেশনা চান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রেলের কোনো সমস্যা না থাকলে নিজেদের মতো পরিকল্পনা করে রেল চলাচল শুরু করা যেতে পারে। এরপর রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে ধাপে ধাপে ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় বলেন, তাঁরা পর্যায়ক্রমে ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাল মালবাহী ট্রেন দিয়ে শুরু হবে। এরপর স্বল্প দূরত্বের ট্রেন, সর্বশেষ আন্তনগর ট্রেন চালু করা হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, আন্তনগর ট্রেনগুলো দূরের পথে চলাচল করে। অনেক ট্রেন গভীর রাতে চলে। এসব ট্রেনের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে রেলওয়ে পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। পুলিশের সবাই এখনো যোগদান করেননি। ফলে ট্রেন ও স্টেশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে কি না, সেই শঙ্কা আছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন ইতিমধ্যে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব পুলিশ সদস্যকে চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। রেল কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এ সময়ের মধ্যে পুলিশের সক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া কিছুটা সময় পেলে আন্তনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিটও বিক্রি সম্ভব হবে। স্বাভাবিক সময়ে আন্তনগর ট্রেনের টিকিট ১০ দিন আগে থেকে বিক্রি শুরু হয়।
এদিকে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীও তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করাসহ ১২ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে। ফলে রেল কর্তৃপক্ষকে তাদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করে একটা সুরাহায় আসতে হবে।
রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয় না। মাল ও জ্বালানিবাহী ট্রেনও চাহিদা থাকলে যেকোনো সময় চালানো যায়। কিন্তু দূরপাল্লার আন্তনগর ট্রেন চালাতে নানা আয়োজন লাগে। এ জন্যে প্রথমে মাল ও জ্বালানি তেলবাহী এবং স্বল্প দূরত্বের ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন সংঘাতে রূপ নিলে গত ১৮ জুলাই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্বল্প দূরত্বে মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছিল। চলেছিল কিছু মালবাহী ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেনও। কিন্তু ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। কারফিউ কিংবা কোনো বাধানিষেধও নেই। এরপরও রেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে সরকারের মন্ত্রীরাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। তিন দিনের মতো দেশে কার্যত সরকার ছিল না। অফিস-আদালতও সেভাবে চালু হয়নি।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ট্রেন চালু করার মতো সব ধরনের প্রস্তুতি ও লোকবল রয়েছে। রেলের লাইন কিংবা ট্রেন চালানোর কোনো ব্যবস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা না পাওয়ায় রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রেলের মহাপরিচালক ট্রেন চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রতিদিন ৪০০টির মতো যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী, বন্ধন ও মিতালি এক্সপ্রেসও রয়েছে। আন্তদেশীয় ট্রেনগুলো ১৮ জুলাই থেকে বন্ধ করার পর আর চালু হয়নি। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া এসব ট্রেন এখনই চালু করা যাবে না। সারা দেশে ট্রেনে প্রতিদিন চলাচল করেন প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী।