বৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের চাপ কম থাকায় সুনামগঞ্জে কমতে শুরু করেছে সুরমা, যাদুকাটা, বৌলাই, পাটলাইসহ সবক’টি নদ-নদীর পানি। এতে করে স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। এদিকে নদীর পানি কমলেও দুর্ভোগ কমছে না সুনামগঞ্জের মানুষের। জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্না লের ঘরবাড়িতে পানি থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন অনেকে। সেখানে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য সংকটসহ নানা সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যা দুর্গতরা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রান সামগ্রী দেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান পানিবন্দিরা। তবে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র না গেলেও ঘরে থাকা রান্নার চোলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শুকনো খাবারই এখন তাদের একমাত্র ভরসা। অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। এদিকে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলী জমি, পুকুরের মাছসহ প্রভৃতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে সৃষ্ট বন্যার রেশ না কাটতেই ফের বন্যার কবলে পড়ে সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন জেলার মানুষ।
সদর উপজেলার দেখার হাওরপাড়ের হতদরিদ্র মহিলা খাদিজা বিবি জানান, অনেক কষ্ট করে জমানো টাকা দিয়ে ভিটায় মাটি কাটিয়ে উঁচু করেছিলাম। পরপর দুইবারের বন্যা সেই সাথে হাওরের আফালে ভিটার মাটি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। মাথা গোঁজার শেষ সম্ভলটুকু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমাদের আর থাকার কোন জায়গা না থাকাই রাস্তায় এখন বসবাস করতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবাননগর ইউনিয়নের গোধারগাঁও গ্রামের নবীর হোসেন বলেন, গত বন্যায় আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি ভেঙ্গে যায়। অনেক বছর ভোগান্তির পর এই রাস্তাটি পেয়েছিলাম আমরা। টানা দুই বন্যায় রাস্তাটি ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। এখন আবারো সেই আগের দুর্ভোগ নিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হবে।
আশ্রয়কেন্দ্র থাকা শাহিন জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় জীবন বাঁচাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসি। তবে এখানেও আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। খাবার ও বিশুদ্ধ পানিও শৌচাগার সংকটে রয়েছি আমরা। সেই সাথে গৃহপালিত পশুর খাদ্য না থাকায় গরু-মহিষ নিয়ে রয়েছি বেকায়দায়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজাউল করিম জানান, বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি, ফসল, মৎস্য, ও হাস-মুরগীর খামারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরী করা হবে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে মন্ত্রনালয়ে পাঠালে তাদের অনুকূলে যে বরাদ্ধ আসবে সেখান থেকেই পরবর্তীতে তাদের সহযোগিতা করা হবে।