টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার প্রায় ৮ লক্ষাধিক মানুষ। জেলা শহরের পশ্চিম হাজীপাড়া, ষোলঘর, নবীনগর, উকিলপাড়া, হাছননগর, নতুনপাড়াসহ সবক’টি পয়েন্ট বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
মানুষের বসতবাড়িতে পানি ডুকায় আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় মালামালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন দোকানপাঠে পানি উঠায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন দোকানিরা। তাদের লক্ষাধিক টাকার মালামাল বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
অনেকেই তাদের দোকানের দ্রব্যাদি পানির হাত থেকে বাঁচাতে উঁচু স্থানে নিয়ে রাখছেন। এদিকে মানুষের বসতবাড়িতে পানি উঠায় অনেকের রান্নার ছোলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাই নিজেদের জান মালের রক্ষায় নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। ঘরে থাকা আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় জিনিস, গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হচ্ছে জেলার লাখো মানুষ। অনেকে দুই দিন ধরে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করলেও মিলছে না কোন ত্রানসামগ্রী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব ত্রান সামগ্রী দেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান বন্যার্তরা। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত শৌচাগার ব্যাবস্থা না থাকায় বন্যার্তরা পড়েছেন বিপাকে। এদিকে বন্যাকে পুঁজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে সুনামগঞ্জে বন্যাদুর্গতের জন্য ৬৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে জেলার ১৩০৫টি গ্রাম। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে জেলায় ৪০ লক্ষ টাকা ও ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, জগন্নাথপুর, ছাতক-দোয়ারাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্না লের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ঘরবাড়িতে পানি ডুকে যাওয়ায় জানমাল নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা। রান্নাবান্নার কোন ব্যবস্থা না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন বানভাসী মানুষরা।
তবে বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি শ্যামল বণিক এর নেতৃত্বে বন্যার্থদের উদ্ধার ও ত্রান বিতরণের দৃশ্য চোখে পড়ার মত। তিনি বন্যার শুরু থেকেই উপজেলার মানুষের নিরাপত্তায় উদ্ধার অভিযান ও অনাহারীদের জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করেন।
এদিকে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সাথে সবক’টি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্যার্থরা।
সুনামগঞ্জ পৌরশহরের কাজীর পয়েন্টের বাসিন্দা আব্দল মিয়া জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে আমাদের বাসাবাড়ি তলিয়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আমরা বিপাকে রয়েছি। এখন নিজেদের জান বাঁচাতে স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ঠাই নিয়েছি।
দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা কালাম মিয়া জানান, বন্যার পানিতে আমাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র ও গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে এখন আশ্রয় কেন্দ্র ঠাই নিয়েছি। খাবার ও পানির সংকটে রয়েছি আমরা। সবকিছু হারিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। কোন ত্রান সামগ্রী এখনো পাই নি। প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিকে ছেয়ে আছি আমরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২৬ ও ছাতকে ১২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা মোকাবেলায় সবাইকে সতর্ক থাকার আহব্বান জানান তিনি।
এদিকে বন্যাকে পুঁজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হলে অসাধু ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।