বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো এবং তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে পরিবারের আবেদনের বিষয়ে আজ বুধবারই (১৬ মার্চ) মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে তো জামিন দেওয়া হয়নি, জামিন দেয় আদালত। যেটা করা হয়েছে সেটা হচ্ছে, দুই-আড়াই বছর আগে উনার জন্য পারিবারিকভাবে একটা দরখাস্ত করা হয়। সেটা কোনো আইনের উল্লেখ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতার কারণে এটা আইনের মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী তাকে তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এটা কিন্তু জামিন না, এটা মুক্তি।
তিনি বলেন, উনারা (খালেদা জিয়ার পরিবার) আরেকটা দরখাস্ত করেছেন, এক্সটেনশনের (মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর) জন্য। সেই দরখাস্তটা আমার কাছে আসছে। আমরা পাঠিয়ে দেবো মতামত। সেই মতামত জানবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে।
কবে নাগাদ জানা যাবে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আজকেই চলে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
এর পরের পদক্ষেপ কী হবে, স্বরাষ্ট্র হয়ে কী তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, না। আমার মনে হয় না এটা আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। কারণ গতবার যেটা দিয়েছিলাম, সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়নি
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওনাদের (খালেদা জিয়া পরিবার) একটা পত্র আমরা পেয়েছি। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে যে পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হবে সেখানে প্রেরণ করবো আমরা।
এদিকে দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ মার্চ। এই অবস্থায় কয়েক দিন আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো এবং চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন।
বর্তমানে খালেদা জিয়ার নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা রয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানে তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান মেডিকেল বোর্ড। গত ১ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
এর আগে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই দফা খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে যেতে হয়। ৭৬ বছর বয়সী এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে তার দণ্ড স্থগিত রয়েছে।
এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড একই আদালত। রায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
২০২০ সালের মার্চে দেশে মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়। প্রথম দফা মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে ওই বছরের ২৫ আগস্ট তার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। এরপর ২৫ মার্চ থেকে মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়। সবশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ায় সরকার।