Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
রাজশাহী গোদাগাড়ী অঞ্চলের বিখ্যাত কালাই রুটি।
ঢাকা ০৩:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী গোদাগাড়ী অঞ্চলের বিখ্যাত কালাই রুটি।

  • মোঃ আরিফ হোসেন
  • আপডেট সময় ০৭:১৮:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০২২
  • ৬৩৮ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী, জেলা ,গোদাগাড়ী

কালাই রুটির দোকান রাজশাহী জেলা গোদাগাড়ী সহ উত্তরবঙ্গের গ্রামগঞ্জে সকল অঞ্চলে
কালাই রুটি বানানোর এমন আয়োজন হর হামেশাই নজর কাড়ে। পরিমাণমতো খামির হাতের তালুতে চেপে চেপে রুটি বানিয়ে সেটি ভাজা হয়। সাধারণত  মাটির খোলায় এ রুটি বানানো হয়। মাসকালাই ডালের গুঁড়া দিয়ে মোটা করে বানানো হয় বলেই এর নাম কালাই রুটি। উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী আম জনতার মাঝে খুবই জনপ্রিয় এই রুটি । কালচে বাদামী রঙের  কালাই রুটি খুব মজাদার বলেই উত্তরবঙ্গের গণ্ডি পেরিয়ে এর জনপ্রিয়তা এখন ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য জেলা শহরে । উত্তর বঙ্গের প্রাণকেন্দ্র রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী বরেন্দ্রভূমি    এলাকায় এ রুটির জনপ্রিয়তা বেশি।   কালচে বাদামী বর্ণের কালাই রুটি তৈরি হয় উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি অনুসারে। কালাই রুটির খামির বানাতে দুই ভাগের এক ভাগ মাসকলাই ডালের গুঁড়া পরিমাণমতো লবণ ও পানি লাগে । অন্য রুটির মতো কালাই রুটি বেলুন পেরিতে বেলে কালাই রুটি তৈরি হয়না। হাতের তালুতে নিয়ে  ঘুরিয়ে, ঘুরিয়ে চেপে, চেপে নানান কাইদা , কৌশলে দেয়া হয় এর নির্দিষ্ট আকার। হাতে পানির ব্যাবহার হয় রুটি যেন না লাগে।
ভর্তা, চাটনি বা মাংস সহযোগে এ রুটি খেতে দারুন মজাদার। কালাই রুটি আকারে বড় ও পুরোট করে বানানো হয়, তাইতো বরেন্দ্রভূমি এলাকার নববধূরা
সূর্য ওঠার আগেই তার বরের জন্য রুটি বানিয়ে রাখে। গৃহস্থালী কাজের জন্যে অনায়াসে যেন তাদের সারা দিন পার হয়। গন গনে আগুনের তাপে শ্যাকা হয় বলে এ রুটি গরমে শক্ত অবস্থায় খেতে হয় ঠান্ডা হলে খাওয়ার সাদ থাকে না। কালাই রুটি প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে তা গরম অবস্থায় খেতে হবে। এ রুটি  মূলত সকালের নাস্তায় দেওয়া হলেও এখন মানুষ  রাতেও খান। আজকাল রুটি বানাতে বানাতে  শৈশবে ফিরে যান দোকানি। গৃহস্থ বাড়ির মানুষগুলো খুব ভোরে বাড়িতে চুলা জ্বালার  আগেই বেরিয়ে যেতেন মাঠে কাজ করতে। পরে ঘরের বউ রুটি বানাতে বসতেন। রুটি খোলায় দেওয়ার আগে তা গরম করতে হয় আর সেই সময়টাতেই পুড়িয়ে নেয়া হয় বেগুন। পোড়া হয়ে গেল  উপরের পোড়া খোশা তুলে নিয়ে ভেতরে শ্বাসের সঙ্গে আবার বাটা লবণ, পেঁয়াজ ও মরিচ কুচি মিশিয়ে তৈরি হয় বেগুনের ভর্তা। এবার রুটি মাঠে পাঠানোর পালা রুটির বুকের উপর লবণ ও বেগুন ভর্তা মাখিয়ে গামছা দিয়ে বেঁধে পরিবারের ছোটদের হাতে দিয়ে মাঠে বাবার কাছে, দাদার কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হতো। একালের গৃহস্থ বাড়ির মানুষগুলোর এমন অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই রুটির সঙ্গে । রুটি কে ঘিরে এই গল্পগুলো তাই কোন লিখিত নথিভূক্ত ইতিহাস নয় আগেকার গৃহস্থ বাড়ির মা খালা দাদি-নানিদের জীবনের স্মৃতি ও গল্প। গ্রামের বাসিন্দাদের যাদের বয়স পঞ্চাশের কোঠায় তাদের কর্মজীবন এমনই ছিল। শুধু  সাদ নয় আগের স্মৃতি গুলো আবার মনে করার জন্য হলেও কৃষি কাজ ছেড়ে দিলেও কালাইয়ের ক্ষেত থেকে শহরের ডাইনিং টেবিল পর্যন্ত  সবখানে শোভা পায় এই ঐতিহ্যবাহী কালাই রুটি । কালাই রুটি তৈরির প্রক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় বরেন্দ্রভূমি গোদাগাড়ীর এক গৃহস্থবাড়ির দাদীর কাছে তিনি বলেন দুটি কালাই রুটি তৈরি করতে মাসকালাইয়ের আটা লাগবে প্রায় ২০০ গ্রাম তার সঙ্গে লাগবে ১০০ গ্রাম চালের আটা আর লবণ পরিমাণমতো। আটার মিশ্রণের উপর নির্ভর করবে রুটির গঠন কেমন হবে । কালাই আটা বেশি দিলে রুটি শক্ত হবে আর চালের আটা বেশি দিলে রুটি হবে নরম। তবে  সাধারণত রুটির প্রকার তুলনায় কালাই রুটি শক্তি হয়। কালাই রুটি অন্য রুটির তুলনায় আকারে  দ্বিগুণ।  অনেক শহর মুখি মানুষ এ রুটির টানে শহর থেকে গ্রামে আসে। উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র  রাজশাহী জেলা গোদাগাড়ী উপজেলার ধানসিঁড়ি , পদ্মা পাড়ের চর অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে কালাই রুটি এখনো  প্রধান খাবার হয়ে আছে।
জনপ্রিয় সংবাদ

বোয়ালখালী’র লোকমানের বিরুদ্ধে দুদেকে অভিযোগ 

রাজশাহী গোদাগাড়ী অঞ্চলের বিখ্যাত কালাই রুটি।

আপডেট সময় ০৭:১৮:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০২২
কালাই রুটির দোকান রাজশাহী জেলা গোদাগাড়ী সহ উত্তরবঙ্গের গ্রামগঞ্জে সকল অঞ্চলে
কালাই রুটি বানানোর এমন আয়োজন হর হামেশাই নজর কাড়ে। পরিমাণমতো খামির হাতের তালুতে চেপে চেপে রুটি বানিয়ে সেটি ভাজা হয়। সাধারণত  মাটির খোলায় এ রুটি বানানো হয়। মাসকালাই ডালের গুঁড়া দিয়ে মোটা করে বানানো হয় বলেই এর নাম কালাই রুটি। উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী আম জনতার মাঝে খুবই জনপ্রিয় এই রুটি । কালচে বাদামী রঙের  কালাই রুটি খুব মজাদার বলেই উত্তরবঙ্গের গণ্ডি পেরিয়ে এর জনপ্রিয়তা এখন ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য জেলা শহরে । উত্তর বঙ্গের প্রাণকেন্দ্র রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী বরেন্দ্রভূমি    এলাকায় এ রুটির জনপ্রিয়তা বেশি।   কালচে বাদামী বর্ণের কালাই রুটি তৈরি হয় উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি অনুসারে। কালাই রুটির খামির বানাতে দুই ভাগের এক ভাগ মাসকলাই ডালের গুঁড়া পরিমাণমতো লবণ ও পানি লাগে । অন্য রুটির মতো কালাই রুটি বেলুন পেরিতে বেলে কালাই রুটি তৈরি হয়না। হাতের তালুতে নিয়ে  ঘুরিয়ে, ঘুরিয়ে চেপে, চেপে নানান কাইদা , কৌশলে দেয়া হয় এর নির্দিষ্ট আকার। হাতে পানির ব্যাবহার হয় রুটি যেন না লাগে।
ভর্তা, চাটনি বা মাংস সহযোগে এ রুটি খেতে দারুন মজাদার। কালাই রুটি আকারে বড় ও পুরোট করে বানানো হয়, তাইতো বরেন্দ্রভূমি এলাকার নববধূরা
সূর্য ওঠার আগেই তার বরের জন্য রুটি বানিয়ে রাখে। গৃহস্থালী কাজের জন্যে অনায়াসে যেন তাদের সারা দিন পার হয়। গন গনে আগুনের তাপে শ্যাকা হয় বলে এ রুটি গরমে শক্ত অবস্থায় খেতে হয় ঠান্ডা হলে খাওয়ার সাদ থাকে না। কালাই রুটি প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে তা গরম অবস্থায় খেতে হবে। এ রুটি  মূলত সকালের নাস্তায় দেওয়া হলেও এখন মানুষ  রাতেও খান। আজকাল রুটি বানাতে বানাতে  শৈশবে ফিরে যান দোকানি। গৃহস্থ বাড়ির মানুষগুলো খুব ভোরে বাড়িতে চুলা জ্বালার  আগেই বেরিয়ে যেতেন মাঠে কাজ করতে। পরে ঘরের বউ রুটি বানাতে বসতেন। রুটি খোলায় দেওয়ার আগে তা গরম করতে হয় আর সেই সময়টাতেই পুড়িয়ে নেয়া হয় বেগুন। পোড়া হয়ে গেল  উপরের পোড়া খোশা তুলে নিয়ে ভেতরে শ্বাসের সঙ্গে আবার বাটা লবণ, পেঁয়াজ ও মরিচ কুচি মিশিয়ে তৈরি হয় বেগুনের ভর্তা। এবার রুটি মাঠে পাঠানোর পালা রুটির বুকের উপর লবণ ও বেগুন ভর্তা মাখিয়ে গামছা দিয়ে বেঁধে পরিবারের ছোটদের হাতে দিয়ে মাঠে বাবার কাছে, দাদার কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হতো। একালের গৃহস্থ বাড়ির মানুষগুলোর এমন অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই রুটির সঙ্গে । রুটি কে ঘিরে এই গল্পগুলো তাই কোন লিখিত নথিভূক্ত ইতিহাস নয় আগেকার গৃহস্থ বাড়ির মা খালা দাদি-নানিদের জীবনের স্মৃতি ও গল্প। গ্রামের বাসিন্দাদের যাদের বয়স পঞ্চাশের কোঠায় তাদের কর্মজীবন এমনই ছিল। শুধু  সাদ নয় আগের স্মৃতি গুলো আবার মনে করার জন্য হলেও কৃষি কাজ ছেড়ে দিলেও কালাইয়ের ক্ষেত থেকে শহরের ডাইনিং টেবিল পর্যন্ত  সবখানে শোভা পায় এই ঐতিহ্যবাহী কালাই রুটি । কালাই রুটি তৈরির প্রক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় বরেন্দ্রভূমি গোদাগাড়ীর এক গৃহস্থবাড়ির দাদীর কাছে তিনি বলেন দুটি কালাই রুটি তৈরি করতে মাসকালাইয়ের আটা লাগবে প্রায় ২০০ গ্রাম তার সঙ্গে লাগবে ১০০ গ্রাম চালের আটা আর লবণ পরিমাণমতো। আটার মিশ্রণের উপর নির্ভর করবে রুটির গঠন কেমন হবে । কালাই আটা বেশি দিলে রুটি শক্ত হবে আর চালের আটা বেশি দিলে রুটি হবে নরম। তবে  সাধারণত রুটির প্রকার তুলনায় কালাই রুটি শক্তি হয়। কালাই রুটি অন্য রুটির তুলনায় আকারে  দ্বিগুণ।  অনেক শহর মুখি মানুষ এ রুটির টানে শহর থেকে গ্রামে আসে। উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র  রাজশাহী জেলা গোদাগাড়ী উপজেলার ধানসিঁড়ি , পদ্মা পাড়ের চর অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে কালাই রুটি এখনো  প্রধান খাবার হয়ে আছে।