রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার তৎকালীন ওসি মাহবুবুল আলমের ফাঁস হওয়া আলোচিত ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডটি তাঁরই। পুলিশের তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। ওই অডিওতে এক নারীর কাছে সাত লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন ওসি মাহবুবুল আলম। যদিও অডিওটি ফাঁস হওয়ার পর ‘এডিটেড’ (সম্পাদিত) বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
এ ঘটনায় মাহবুবুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ১৯ অক্টবর এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেই সাথে তাকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ওসি মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন সাহারা খাতুন (২৮) নামের এক নারী। এর সঙ্গে ঘুষ চাওয়ার ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি রেকর্ডও সংযুক্ত করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ওসি মাহবুবুলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এ ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেন পুলিশ সুপার। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। পরে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও পাঁচ দিনের সময় দেন পুলিশ সুপার।
তদন্ত কমিটি ৪০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগকারী সাহারা খাতুন, ওসি মাহবুবুল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রুবেল অন্যতম। সাক্ষাৎকারে অভিযোগকারী নারী পুরো ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের অডিও রেকর্ড পুলিশের কাছে জমা দেন।
ফাঁস হওয়া ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের অডিওর একটি অংশে মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘এক মন্ত্রী বাদে কারও কথা শুনতে এখানে আসি নাই।…এই লোকটা রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকে সম্মান করি। মন্ত্রী মানেই রাষ্ট্র। আর মন্ত্রী অত্যন্ত ভদ্রলোক মানুষ। আমাকে নিয়ে আসছে সে। আমাকে গাইবান্ধা থেকে নিয়া আসছে। তাহলে আমি যদি খারাপ হই, তাহলে কষ্ট পাবে।’
ওসির কথার মধ্যে চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সুর মিলিয়ে বলেন, ‘আপনাকে নিয়া আসছে একেবারে নির্বাচনটা পার করে দিবেন…।’ জবাবে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘তা তোমাদের রিজিকে আছে কি না, আমি জানি না। এখন এই যে নির্বাচন কমিশনার নাটক শুরু করেছে।
ওই অডিওতে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার স্বামী কিন্তু আমার কম ক্ষতি করে নাই। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখনো কিন্তু তোমার গায়ে আঁচড় দিইনি। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে (পুলিশ সুপার) কথা দিয়ে এসেছি। স্যারের এখন কী কী লাগবে- পাঁচ লাখ টাকা। কী কী জিনিস চাইছে- সাত লাখ টাকা লাগবে। আমি বলেছি, আমি চেষ্টা করব।
স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। ওপেন। তখন আর কথা কয় না। তোমরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের (এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের) চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।
অডিওতে আরো শোনা যায়, মাদক সম্রাট মুক্তা, সাব্বির, ছাত্রলীগ নেতা শুভকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। যদি টাকা ৫ লাখ দাও তাহলে ভোটের আগে ওদের ধরে জেলে ঢুকাবো, থাকি আর না থাকি।
তবে এখন পর্যন্ত ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন চারঘাটের ১৬ মামলার অসামী মাদক সম্রাট মুক্তার হোসেন মুক্তা ও তার সহযোগীরা। সাম্প্রতিক চামটা গ্রামের ইউপি সদস্য আশরাফের মৃত্যু হয়। আর সেই ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক সম্রাট মুক্তা। মুক্তা চারঘাট উপজেলার চামটা গ্রামের সাইদুর রহমান আঞ্জুর ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, চাঁদাবাজিসহ ১৬ টি মামলা রয়েছে। তবে কেন এখন পর্যন্ত তকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না এ বিষয় কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।