দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ভাড়া বাড়ায়নি রেলওয়ে। তবে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালুর পর স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তি ভাড়া নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অবকাঠামো নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে ট্রেনে স্বাভাবিকের তুলনায় কিলোমিটার প্রতি অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। পদ্মা সেতুর পাশাপাশি আগামীতে রেলওয়ের ১০০ মিটারের ঊর্ধ্বে সব সেতু ও ভায়াডাক্টে পন্টেজ চার্জ আরোপ করবে রেলওয়ে। ফলে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে রেলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ভাড়া বাড়বে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের নিয়মানুযায়ী সেতুতে এক্সট্রা ডিসটেন্স পন্টেজ চার্জ আরোপের নিয়ম রয়েছে। তবে রেলওয়ে শুধু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, যমুনা সেতু, ভৈরব ও ব্রহ্মপুত্র সেতু থেকে বাড়তি পন্টেজ চার্জ ভাড়ার সঙ্গে আদায় করত। সর্বশেষ পদ্মা সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালুর সময় ভায়াডাক্টের পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হয়। এতে পদ্মা সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পন্টেজ দূরত্ব হিসাবে ১৫৪ কিলোমিটার এবং গেণ্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার ফ্লাইওভার পন্টেজ দূরত্ব হিসাবে ১১৫ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। রেলওয়ের কিলোমিটারপ্রতি নিয়মিত ভাড়ার সঙ্গে বাড়তি পন্টেজ দূরত্ব যুক্ত করে ট্রেনের যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর পর ২০১২ সালের অক্টোবরে ভাড়া বাড়ায় রেলওয়ে। ওই সময় সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১১০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে রেলের যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ৭-৯ শতাংশ। এরপর কয়েক দফায় রেলওয়ে ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় তা বাড়ানো হয়নি। ফলে দেশের সড়ক পথের বিভিন্ন যানবাহনের ভাড়ার সঙ্গে রেলের ভাড়া কম হওয়ায় ট্রেনে যাত্রী বাড়লেও রাজস্ব বাড়েনি রাষ্ট্রায়ত্ত গণপরিবহন সংস্থাটির। আয়ের বিপরীতে ব্যয় বেশি হওয়ায় ধারাবাহিক লোকসানে থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় রেলপথের ভাড়া না বাড়ানোয় লোকসান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এজন্য রেলওয়ের বিভিন্ন সেতুতে পন্টেজ চার্জ আরোপের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে রেলওয়ের বিপণন বিভাগ।
সর্বশেষ ৮ অক্টোবর পদ্মা সেতুর ভাড়া নির্ধারণে পন্টেজ চার্জ যুক্ত করতে একটি চিঠি দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. তোফিক ইমামের সই করা ওই চিঠিতে পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটার ব্রিজের ক্ষেত্রে এক্সট্রা ডিসট্যান্স অব পন্টেজ চার্জ ২৫ কিলোমিটার এবং প্রতি কিলোমিটার ভায়াডাক্টের জন্য এক্সট্রা ডিসট্যান্স অব পন্টেজ চার্জ পাঁচ কিলোমিটার নির্ধারণ ছাড়াও ১০০ মিটার বা ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু ও ভায়াডাক্টের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশনা দেয়া হয়। রেলওয়ের মহাপরিচালককে দেয়া ওই চিঠিতে পরবর্তী ভাড়া সমন্বয়ের সময় ১০০ মিটার বা ১০০ মিটারের ঊর্ধ্বে সেতু ও ভায়াডাক্টের পন্টেজ চার্জ যুক্ত করার নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ৫ অক্টোবর পদ্মা সেতুতে প্রস্তাবিত ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণের একটি প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলের বাণিজ্যিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সবচেয়ে ছোট এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ভৈরব সেতুতে রেলওয়ে পন্টেজ চার্জসহ ভাড়া আদায় করছে। এ সেতুতে পন্টেজ চার্জ ধরা হয়েছে ২৩ কিলোমিটার। অর্থাৎ এক কিলোমিটার সেতুর জন্য ২৩ কিলোমিটারের ভাড়া দেন যাত্রীরা। রেলওয়ের বর্তমান নিয়মে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর জন্যও বাড়তি পন্টেজ চার্জসহ ভাড়া আদায় করা হবে।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘শুরু থেকেই রেলওয়ের নিয়মে সেতুর জন্য পন্টেজ চার্জসহ ভাড়া আদায়ের বিধান রয়েছে। যদিও সীমিত কয়েকটি সেতু থেকেই রেলওয়ে পন্টেজ চার্জ আদায় করে। যৌক্তিক পন্টেজ চার্জ নির্ধারণের মাধ্যমে রেলের আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে। আগামীতে বিভিন্ন সেতুর মাধ্যমে পন্টেজ চার্জ আদায় হলে রেলওয়ের আয় বাড়ানো সম্ভব হবে।’
জানা গেছে, রেলের কিলোমিটার প্রতি নন-এসি টিকিটের ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা। অন্যদিকে এসি টিকিটের কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। প্রথম শ্রেণী ও এসি টিকিটের ক্ষেত্রে যাত্রীরা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করে। বর্তমানে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুতে পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হলে, সার্বিক ভাড়া না বাড়িয়ে আয় সমন্বয় করা সম্ভব বলে মনে করেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।