তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের হাব হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এলাকায় টার্মিনালের ‘সফট ওপেনিং’ অনুষ্ঠানে এর ফলক উন্মোচন করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারনে এই বাংলাদেশই হবে এক সময় কক্সবাজার বা আমাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের হাব। আমরা বিশ্বাস করি এবং সেভাবেই আমরা এটাকে তৈরি করতে চাচ্ছি।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা দেখেছি পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় কিছু পরিবর্তন হয় যেমন একসময় হংকং ছিল আন্তর্জাতিক হাব, এরপর হলো সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এখন দুবাই। আমি বিশ্বাস করি পূর্ব ও পশ্চিমের আকাশ পথের মধ্যবর্তী হওয়ায় এক সময় আমাদের কক্সবাজার বা হযরত শাহজালাল হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন হাব।
তিনি বলেন, রিফুয়েলিংয়ের জন্য এখানে সবাই আসবে। আসলে বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবে আর কক্সবাজারে নামলে তো আমাদের দীর্ঘ বালুকাময় সী বীচের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। প্রযুক্তি সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলে মানুষের যোগাযোগ সহজ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন সবকিছু উন্নত করার ব্যবস্থাই তাঁর সরকার করবে। ঝরঝরে বিমানের যুগ পেরিয়ে এখন বিমানের বহরে ২১টি অত্যাধুনিক বিমান যোগ হয়েছে, যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করছে। তাছাড়া এই তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে আমাদের আড়াই হাজার নতুন পথ সৃষ্টি হবে।
দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে তাঁর সরকার বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে লালমনিরহাটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড এ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যলিয়’ প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখি আমাদের আশপাশের দেশ চাঁদে চলে যায়। তাই আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো, আমরাও চাঁদে যাব। ভবিষ্যতে সেভাবেই আমরা স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তুলবো।’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, জাপানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী মাসাহিরো কোমুরা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী সাইতো তেতসুও এসময় উপস্থিত ছিলেন।এরআগে সরকার প্রধান তৃতীয় টার্মিনাল প্রাঙ্গণে পৌঁছালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানান।পরে প্রধানমন্ত্রী টার্মিনাল-৩ প্রদক্ষিণ এবং এর বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন।তিনি তাঁর লাগেজ চেকিংয়ের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন পাস করার একটি ড্রেস রিহার্সালেও অংশ নেন এবং তাঁকে পরে বোর্ডিং পাসও দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ও সংসদ সদস্যসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বেবিচক জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল তিন তলা বিশিষ্ট। টার্মিনালের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গ মিটার। যাত্রী ধারণ সক্ষমতা হবে বছরে ১৬ মিলিয়ন। তৃতীয় টার্মিনালের কার পার্কিংয়ে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখা যাবে। উড়োজাহাজ পার্কিং বে থাকবে ৩৭টি। আগমনী যাত্রীদের জন্য লাগেজ বেল্ট থাকবে ১৬টি। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য ১ হাজার ৩০০ বর্গটার আয়তনের একটি কাস্টম হল থাকবে। সেখানে ছয়টি চ্যানেল থাকবে। চেক ইন কাউন্টার থাকবে ১১৫টি, এরমধ্যে স্বয়ংক্রিয় ১৫টি। ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকছে ১২৮টি। এরমধ্যে স্বয়ংক্রিয় ইমেগ্রেশন কাউন্টার ১৫টি। বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৬৬টি। আগমনী ইমিগ্রেশন কাউন্টার ৫৯টি। ভিভিআইপি ৩টি। বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে প্রথম পর্যায়ে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। পরবর্তী সময়ে আরেকটি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আরও ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ যুক্ত করা হবে। বর্তমান টার্মিনাল দুটির সঙ্গে তৃতীয় টার্মিনালের কোনও সংযোগ থাকবে না। তবে পরবর্তী সময়ে প্রকল্পে করিডোর নির্মাণ করা হবে।