বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, নির্বাচন আসলে যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে অথবা নির্বাচন নানাভাবে বির্তকিত করতে ষড়যন্ত্র করেন, বিদেশীদের হাতে হাত মেলান, দেশী-বিদেশী চক্রান্তের সঙ্গে লিপ্ত হন, সেই তারা আবারো আজকে সক্রিয় হয়েছে। তারা বলে, নির্বাচনে অংশ নেব না, শর্ত দেয় ‘শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং কেয়ারটেকার সরকার দিতে হবে।’ আমি সেই বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে বলছি, নির্বাচনে আসবেন কি আসবেন না, সেটি আপনাদের নিজস্ব রাজনৈতিক বিষয়। যদি নির্বাচনে আসেন আপনাদেরই ভালো হবে। নির্বাচনে না এসে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার এমন কোন চক্রান্ত যদি করেন, তাহলে মার্কিন ভিসা নীতিতে কি বললো, সেটি আমরা দেখতে যাব না। বিএনপি-জামায়াতকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। স্যাংশন নিয়ে আওয়ামী লীগের একটা পশমও ছেড়া যাবে না।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়া শিমুল তলার মোড় আয়োজিত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, রাজশাহী মহানগর ও জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন উদ্বোধক বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। সম্মেলনের শুরুতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশ হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তারেক জিয়া লন্ডনে বসে নির্দেশ দেবে, আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে, এই স্বপ্ন দেখেন না। যদি এই খোয়াব দেখেও থাকেন, সেটি কোনদিন আলোর মুখ দেখবে না।
তারেক জিয়ার উদ্দেশ্যে রাসিক মেয়র লিটন বলেন, যদি রাজনীতি করার সখ থাকে দেশে আসেন। আপনার বিরুদ্ধে মামলা আছে, জেলে যান। আপনার নেতাকর্মীরা যদি সোচ্চার হয়, আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাকে ছেড়ে দিতে সরকারকে বাধ্য করতে পারে, জনগণ যদি রায় দেয়, তাহলে বুঝবো আপনি দায়িত্ব নিতে পারবেন।
রাসিক মেয়র বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের নাম বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন কারণে দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটি আমার কমে যাবে। কিন্তু যারা এগুলোকে পুঁজি করে বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়, তারা ব্যর্থ অতীতেও হয়েছে, আগামীতেও হবে।
বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রেসিয়িাম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ২০১৪ সালে আপনারা (বিএনপি) নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। নির্বাচন বর্জন করে জ্বালাও পোড়াও, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, বাসে আগুন, রেললাইন উপড়ে ফেলা, গাছ কাটা সহ ব্যাপক নাশকতা করেছিলেন। কিন্তু আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা প্রমাণ করেছি, আমরা তাদের মোকাবেলা করতে পারি।
যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, নির্বাচন বানচালের কোন ষড়যন্ত্র যুব সমাজ মেনে নিবে না। অনির্বাচিত, অবৈধ সরকার ক্ষমতায় বসানোর অপচেষ্টা করা হলে তা প্রতিহত করা হবে। শটকার্টে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ শেখ হাসিনা খোজে না। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীতে শেখ হাসিনা আবারো ক্ষমতায় আসবেন।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে শুধুমাত্র দেশ পরিবর্তন হয়েছে তা নয়, তিনি দেশের মানুষের ভাগ্যেরও পরিবর্তন করেছেন। দেশ যখন বদলে গেছে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশ যখন এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারেক জিয়া আবার ভবন, খোয়াব ভবন তৈরি করবেন। সারাদেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা হয়েছিল, এবার ৫ হাজার জায়গায় বোমা হামলা হবে। রাজশাহীর বাগমারায় বাংলা ভাইয়ের উত্থান হয়েছিল, এবার সারাদেশে বাংলা ভাই হবে। বাংলাদেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তানের পর্যায়ে চলে যাবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমাদের বলেছে, ‘আগামী মাসে ফাইনাল খেলা হবে।’ আমরা ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত আছি। তবে ফাইনাল খেলার আগে আপনাদের খেলোয়াড়রা দল বদল করেন কিনা বিএনপির ভাইয়েরা সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, যুবলীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত মাঠে নামতে পারবে না। দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা যাদের নৌকা প্রতীক দিবেন, সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে তাদের বিজয়ী করতে হবে।
রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি মোঃ রমজান আলীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডু ও সদস্য বেগম আখতার জাহান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডা: মোঃ মনসুর রহমান, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আয়েন উদ্দিন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আবিদা আনজুম মিতা, বিশেষ বক্তা হিসেেব যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ হেলাল উদ্দিন, রাজশাহী জেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ আবু সালেহ সহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে সম্মেলনে সঞ্চালক ছিলেন রাজশাহী জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আজম সেন্টু।সম্মেলনে যুবলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।#