নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় পৃথক তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬ হাজার অবৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এ যেন তাদের একটি বাণিজ্য হয়ে পড়েছে।
অর্থের বিনিময়ে ধারাবাহিক “গ্যাস লাইন কর্তন ও সংযোগ”।
উপজেলার পিরোজপুর, মোগরাপাড়া ও সনমান্দী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে এ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় অভিযানকারী দল অবৈধ গ্যাস সংযোগে ব্যবহৃত ১৫ কিলোমিটার পাইপলাইন ও রাইজার জব্দ করে। এমন অভিযানের খবরে পুরো সোনারগাঁসহ নারায়ণগঞ্জে সাধুবাদের পরিবর্তে ধিক্কার উঠেছে তিতাসের কোম্পানির বিরুদ্ধে ।
এলাকাবাসী জানান এমন ভাবে প্রতি মাসে মাসে গ্যাস লাইন যদি কর্তন করা হয়, তাহলে আমরা চরম ভোগান্তির মাঝে পড়ে যাচ্ছি। রান্নাবাড়া ঠিক মতন করতে পারছি না, ছেলে স্বামী সন্তানরা খাবার নিয়ে সময় মতন কাজে যেতে পারছে না, এতে করে আরো বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
অত্র এলাকাবাসী আরো বলেন আমাদের গ্যাস সংযোগ যদি অবৈধ হয়ে থাকে? তাহলে বৈধ করার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। এমনিতেই বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের পত্রের মূল্য লাগামহীন। সেখানে যদি ছেলে সন্তানরা কাজ করতে না পারে পড়ালেখা করতে না পারে তাহলে আমরা আরো ভোগান্তিতে পড়ে যাব।
সরকারের কাছে আমাদের বিশেষ আবেদন,
হয় আমাদের গ্যাস-সংযোগ বৈধ করে দিন, নয়তো তিতাস কোম্পানিকে এই গ্যাস কাটার বাণিজ্য খেলা বন্ধ করতে বলেন আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে আর পারছিনা বলেন সাধারণ জনগণ।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণদের মাথার উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে তিতাসের অসাধু চক্র প্রতি মাসেই এহেন কাজ কর্তন, সংযোগ বাণিজ্য মঞ্চায়ন করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র মহলে, এ যেন মরার উপর খাড়া।
প্রতি মাসে জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ করা লক্ষ মাত্রা (টার্গেট ফিলাপ) পূরণ করতেই এমন নাটক মঞ্চায়ন করতে হয় তিতাসের অসাধু এই চক্রের। প্রতি মাসে তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পিছনে সরকারী কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ব্যয় করে বেতন ভাতা দেয়ায় সরকারের কোন কাজ করছে এই দপ্তর? এমন জবাবদিহিতা থেকে নিজেদের রক্ষা করতেই এই নাটক মঞ্চায়ন করতে হচ্ছে বলেও দাবী করেছে তিতাস কর্মকর্তাদের নির্ভরশীল সূত্র।
সূত্রটি জানায়, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এতো অবৈধ তিতাসের সংযোগ রয়েছে তা কি এই অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা আগে থেকেই জানতেন না? বছরের পর বছর অবৈধ সংযোগ দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব চুরি হচ্ছে তা কি জানতেন না এই অভিযানে আসা কর্মকর্তারা? তাহলে এতো দিন কি করেছে তিতাসের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ? আর এখন নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ক্যামেরাম্যান ডেকে এনে টাকা দিয়ে গণমাধ্যমের কিছু অসাধুদের মাধ্যমে রাজ্য জয় করার মতো বাদ্য-বাজনা বাজাচ্ছে তিতাসের অসাধুরা। এই নাটক বন্ধ করার জন্য সঠিক তদন্ত করে অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নারায়ণগঞ্জে অন্তত শতশত কোটি টাকার তিতাস গ্যাস চুরি বন্ধ হবে ।
জানা যায়, প্রতি মাসের ন্যয় এবারও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইব্রাহীম এর উপস্থিতিতে তিতাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালায় তিতাসের সেই চিহ্নিত চক্র। যাদের বিরুদ্ধে কথিত বিশেষ পেশার নামধারীদের টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় এনে সংবাদ প্রকাশের নামে নাটক মঞ্চায়নের অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার তিতাসের অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন- তিতাস গ্যাস মেঘনাঘাট অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান, সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান, প্রকৌশলী তৌফিকুর রহমানসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। অভিযানে নেতৃত্ব দেন তিতাস গ্যাস সোনারগাঁ বিপণন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক সুরুজ আলম। এই সুরুজ মিয়ার অপকর্ম নিয়ে ব্যপক সমালোচনা রয়েছে তিতাস কর্মকর্তাদের মাঝেই ।
অভিযানের পর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সোনারগাঁ বিপণন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক সুরুজ আলম জানান, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের প্রায় ৬ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।