বাংলাদেশ পুলিশের আইকন,লেখক, মানবিক পুলিশ অফিসার , ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার) (পিপিএম বার) অতিরিক্ত আইজিপি (ট্যুরিস্ট পুলিশ) হিসাবে দায়িত্ব পেলেন।
ডিআইজি হাবিবুর রহমান কর্মক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা, সাহসিকতার দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের কারণে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) সম্মাননা পেয়েছেন ।
তিনি বদলে দিয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে। তিনি যৌনপল্লীর শিশুদের মধ্যে ছরিয়েছে শিক্ষার আলো । ভালো কাজের জন্য তিনি পেয়েছেন মানবিক পুলিশ অফিসার খ্যাতি।
পেশাগত কাজের বাইরে লেখালেখিও করেন। এ ছাড়াও তিনি একজন ক্রীড়া সংগঠকও। কাজ করছেন দেশের কাবাডি নিয়েও।
পুলিশি সেবার বাইরে গিয়ে মানবিক কাজ করতে তিনি সবসময় ভালোবাসেন।
অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তিনি ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’। বর্তমানে সাভার ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও সিংড়া এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি নিজেই লিখেছেন বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্ত প্রায় ভাষা নিয়ে ‘ঠার’ নামে একটি বই।
তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে বই সম্পাদনা করেছেন, যাতে দেখিয়েছেন দূরদর্শিতা। বইটিতে তুলে আনেন মন্ত্রীর বাল্যকাল, পড়াশোনা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার বিষয়াবলী। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ গ্রন্থটি। বইটি প্রকাশ করে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড।
এছাড়া ২০১৮ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরে একটি বই সম্পাদনা করেন যার নাম দেন ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’।
ডিআইজি হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগ দেন।
বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থটি এবারের অমর একুশে বইমেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত বইটির পাঠক চাহিদা বেশ ভালো বলে জানিয়েছে প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানটি। তারা বলছে, ক্রেতাদের আগ্রহ বেশ ভালো। প্রতিদিনই কেউ না কেউ এসে বইটি খুঁজছেন।
পাশাপাশি পাঠকরা বলছেন, নানান জনগোষ্ঠীর নানান ভাষা রয়েছে। কিন্তু বেদে জনগোষ্ঠীর যে একটি আলাদা ভাষা রয়েছে, তা আমাদের অজানা ছিল। সেই আগ্রহ থেকেই এই ভিন্নধর্মী বইটি নেড়ে চেড়ে দেখা বা সংগ্রহ করা।
ডিআইজি হাবিবের মানবিকতা
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের হাট বাসুদেবপুর গ্রামে সান্দার বেদে গোত্রের প্রায় ২০০টি পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করেন; যাদের শতভাগ মুসলমান। অথচ এই জনগোষ্ঠীর কেউ মারা গেলে মুসলমান হিসেবে তাদের সৎকারটুকুও করতে পারত না। পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে আশপাশের কোনো কবরস্থানে তাদেরকে কবর দিতে দেওয়া হতো না। এমন করুণ অবস্থা জানতে পরে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি সহকর্মীদের সহযোগিতায় একটি জায়গা খুঁজে পান, যেটি কিনে দান করে দেন এই জনগোষ্ঠীর ২০০ পরিবারের কল্যাণে।
তাছাড়া ২০২০ সালের শুরুতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় বহু পুরনো যৌনপল্লীতে প্রথমবারের মতো একজন যৌনকর্মীর পুরোপুরি ইসলামি প্রথা মেনে জানাজা পড়িয়ে দাফন করা হয়। পরে চেহলামেরও আয়োজন করা হয়। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হিসেবে করে দিয়েছেন পশু খামার। তাছাড়া অনেককে গার্মেন্টসে চাকরি, পার্লার ও খাবার দোকানের ব্যবসা গড়ে দিয়েছেন।
এসব উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন মানবিক পুলিশ হিসেবে সুনাম পাওয়া ডিআইজি হাবিবুর রহমান। এখন নতুনভাবে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীর শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেছেন তিনি। যার সুফলও মিলছে। বিশেষ করে যৌনপল্লীর শত শত শিশুকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে তার হাতে গড়া ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন।
ডিআইজি হাবিবুর রহমানের একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে টেলিকম ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর, যা এক ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দায়বদ্ধতা থেকেই তার এই উদ্যোগ। ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ এটি সর্বসাধারণের প্রবেশের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি “জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭”-এর উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভের ঠিক পাশেই নব-নির্মিত জাদুঘর ভবনের উদ্বোধন করেন।
ডিআইজি হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ পুলিশের গৌরব।