ঢাকা ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সার ও তেলের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৩০/৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। কারণ যান্ত্রিক কৃষিব্যবস্থায় উৎপাদন খরচ অনেকটাই নির্ভর করে ডিজেল তেলের ওপর। এ অবস্থায় কৃষকের জীবনে অর্থনৈতিক সংকট, সেটি আরো প্রকট হবে।

ডিজেল-সারের মূল্যবৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় কৃষক 

ফাইল ছবি।

আমনের ভরা মৌসুমে সারের দাম বাড়ানোর পর হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে ডিজেলের দাম। একের পর এক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা।
এমনিতে এ বছর মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়নি। আমন ধান রোপনের জন্য এ অবস্থায় অতিরিক্ত দামে ডিজেল কিনে দিতে হচ্ছে সেচ, তাহলে কোনোভাবেই লোকসান কাটানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কৃষকেরা। কারণ উৎপাদন খরচ ও পরিবহন খরচ দুটোই বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ডিজেলের মোট চাহিদার বড় একটি অংশ কৃষি ফসল উৎপাদন ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। তেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানোর কারণে কৃষি ফসল উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে প্রায় ৩০ শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি অর্থনীতি। এ অবস্থা চলতে থাকলে থেমে যাবে কৃষি উৎপাদন।
গত ১লা আগষ্ট কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুণনির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর ৬ আগষ্ট শুক্রবার রাতে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা করে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ডিজেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধির পর আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে খরচ হবে ৭-৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইউরিয়া সারে ৩০ কেজি ৬৬০-৬৮০, পটাশ ১০ কেজি ২৮০, ফসফেট ১৫ কেজি ৪২০, জিপসামে ১০ কেজি ২২০ টাকা।
এ ছাড়া শ্রমিক, হালচাষ ও রোপণ করতে আরো ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং সেচ বাবদ খরচ হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। বিগত মৌসুমগুলোতে এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, এবার সার, হালচাষ ও সেচ খরচে কৃষকদের অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার টাকা।
জেলার বিভিন্ন কৃষি মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর অবশেষে সেচ দিয়েই চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকেরা। কেউ জমি প্রস্তুত করতে হালচাষ দিচ্ছেন। কেউবা জমিতে শ্যালো ইঞ্জিনে দিয়ে সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। আবার কেউ কেউ আনুষঙ্গিক কাজ শেষে জমিতে চারা রোপণ করেছেন।
কৃষকেরা জানান, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জমিতে হালচাষ ও সেচ খরচ বেড়ে গেছে। বিগত সময়ে এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে এক চাষ করা হতো ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। ডিজেলের দাম বাড়ার পরদিন থেকেই এক বিঘা জমি চাষ করতে ট্রাক্টর ও পাওয়ারটিলার মালিকেরা নিচ্ছেন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দুই গুণ বেড়েছে ধান উৎপাদনের ব্যয়। কিন্তু সেই তুলনায় মিলছে না ফলন ও দাম।
 উপজেলা তানোরের  কৃষক আনোয়র হোসেন বলেন, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বিঘায় সেচ খরচ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেড়েছে এবং হালচাষে খরচ বাড়ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
এ বিষয়ে ট্রাক্টরের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘গাড়ি চালিয়ে যদি লাভই না হয়, তাহলে চলব কীভাবে? আগে তেলের দাম কম ছিল, চাষের খরচও কম নেওয়া হতো।’ এখন তেলের দাম বেশি তাই চাষ খরচ আমরা বেশি নিচ্ছি।
এদিকে সচেতন মহল বলছেন, সার ও তেলের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৩০/৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। কারণ যান্ত্রিক কৃষিব্যবস্থায় উৎপাদন খরচ অনেকটাই নির্ভর করে ডিজেল তেলের ওপর। এ অবস্থায় কৃষকের জীবনে অর্থনৈতিক সংকট, সেটি আরো প্রকট হবে।
রাজশাহী কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এবছর আমনের চলতি মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় সেচ খরচ ও সালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ফসল উৎপাদনে ব্যয় অনেকটা বেড়েছে।
আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনা প্রেসক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ

সার ও তেলের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৩০/৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। কারণ যান্ত্রিক কৃষিব্যবস্থায় উৎপাদন খরচ অনেকটাই নির্ভর করে ডিজেল তেলের ওপর। এ অবস্থায় কৃষকের জীবনে অর্থনৈতিক সংকট, সেটি আরো প্রকট হবে।

ডিজেল-সারের মূল্যবৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় কৃষক 

আপডেট সময় ০৩:৪৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২২
আমনের ভরা মৌসুমে সারের দাম বাড়ানোর পর হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে ডিজেলের দাম। একের পর এক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা।
এমনিতে এ বছর মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়নি। আমন ধান রোপনের জন্য এ অবস্থায় অতিরিক্ত দামে ডিজেল কিনে দিতে হচ্ছে সেচ, তাহলে কোনোভাবেই লোকসান কাটানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কৃষকেরা। কারণ উৎপাদন খরচ ও পরিবহন খরচ দুটোই বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ডিজেলের মোট চাহিদার বড় একটি অংশ কৃষি ফসল উৎপাদন ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। তেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানোর কারণে কৃষি ফসল উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে প্রায় ৩০ শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি অর্থনীতি। এ অবস্থা চলতে থাকলে থেমে যাবে কৃষি উৎপাদন।
গত ১লা আগষ্ট কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুণনির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর ৬ আগষ্ট শুক্রবার রাতে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা করে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ডিজেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধির পর আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে খরচ হবে ৭-৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইউরিয়া সারে ৩০ কেজি ৬৬০-৬৮০, পটাশ ১০ কেজি ২৮০, ফসফেট ১৫ কেজি ৪২০, জিপসামে ১০ কেজি ২২০ টাকা।
এ ছাড়া শ্রমিক, হালচাষ ও রোপণ করতে আরো ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং সেচ বাবদ খরচ হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। বিগত মৌসুমগুলোতে এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, এবার সার, হালচাষ ও সেচ খরচে কৃষকদের অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার টাকা।
জেলার বিভিন্ন কৃষি মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর অবশেষে সেচ দিয়েই চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকেরা। কেউ জমি প্রস্তুত করতে হালচাষ দিচ্ছেন। কেউবা জমিতে শ্যালো ইঞ্জিনে দিয়ে সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। আবার কেউ কেউ আনুষঙ্গিক কাজ শেষে জমিতে চারা রোপণ করেছেন।
কৃষকেরা জানান, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জমিতে হালচাষ ও সেচ খরচ বেড়ে গেছে। বিগত সময়ে এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে এক চাষ করা হতো ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। ডিজেলের দাম বাড়ার পরদিন থেকেই এক বিঘা জমি চাষ করতে ট্রাক্টর ও পাওয়ারটিলার মালিকেরা নিচ্ছেন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দুই গুণ বেড়েছে ধান উৎপাদনের ব্যয়। কিন্তু সেই তুলনায় মিলছে না ফলন ও দাম।
 উপজেলা তানোরের  কৃষক আনোয়র হোসেন বলেন, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বিঘায় সেচ খরচ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেড়েছে এবং হালচাষে খরচ বাড়ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
এ বিষয়ে ট্রাক্টরের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘গাড়ি চালিয়ে যদি লাভই না হয়, তাহলে চলব কীভাবে? আগে তেলের দাম কম ছিল, চাষের খরচও কম নেওয়া হতো।’ এখন তেলের দাম বেশি তাই চাষ খরচ আমরা বেশি নিচ্ছি।
এদিকে সচেতন মহল বলছেন, সার ও তেলের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৩০/৩৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। কারণ যান্ত্রিক কৃষিব্যবস্থায় উৎপাদন খরচ অনেকটাই নির্ভর করে ডিজেল তেলের ওপর। এ অবস্থায় কৃষকের জীবনে অর্থনৈতিক সংকট, সেটি আরো প্রকট হবে।
রাজশাহী কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এবছর আমনের চলতি মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় সেচ খরচ ও সালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ফসল উৎপাদনে ব্যয় অনেকটা বেড়েছে।