স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এবারও ভারত ও চীনের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। চাষের মাছ উৎপাদনেও একই অবস্থানে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত বিশ্বের সামগ্রিক মৎস্যসম্পদবিষয়ক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। দুই বছর পরপর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২২’ শিরোনামে শুক্রবার (১ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চাষের মাছ উৎপাদনে তিনটি দেশ বিশ্বের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করছে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকার মিসর এই সাফল্য দেখিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বাদুপানির পাখনাযুক্ত মাছ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এসব মাছের মধ্যে ইলিশও রয়েছে। বিশ্বে স্বাদুপানির মাছের ১১ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। যার মোট পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ টন।
ইলিশ মাছ উৎপাদনে বিশ্বে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। পাখনাযুক্ত অন্য প্রধান সাতটি মাছ হচ্ছে রুই, কাতলা, পাঙাশ, তেলাপিয়া, গ্রাসকার্প ও সিলভার কার্প। বিশ্বজুড়ে চাষের ক্ষেত্রে এই সাত মাছকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট যে পরিমাণ মাছ উৎপাদিত হয়, তার মধ্যে কার্পজাতীয় মাছ ২১ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় রুই মাছ, ১১ শতাংশ। এরপরে রয়েছে পাঙাশ ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ, তেলাপিয়া ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, কাতলা পৌনে ৭ শতাংশ ও সিলভার কার্প ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিএফআরআইয়ের তথ্যমতে, দেশে স্বাদুপানির ২৬০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৩০টি প্রজাতির চাষ বেশি হচ্ছে। বাকিগুলোর চাষ বাড়লে বাংলাদেশের মাছ উৎপাদন ৫০ লাখ টনে পৌঁছাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মুক্ত জলাশয়ের মাছ উৎপাদনে সফলতার ক্ষেত্রে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। আর চাষের মাছের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত মাছের জাতগুলো চাষিদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়েছে।
তবে মাছের উৎপাদন ধরে রাখার জন্য নদী ও জলাশয়গুলোকে দূষণমুক্ত করতে হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকোফিশ কার্যক্রমের দলনেতা অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নদ–নদী দূষণমুক্ত না রাখলে ইলিশের উৎপাদন ধরে রাখা সম্ভব হবে না।