Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
আষাঢ়ে সেই শুকিয়ে যাওয়া জীবনে করুণাধারায় নেমে আসা বৃষ্টি
ঢাকা ০৯:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
    বৃষ্টিভেজা বর্ষায় কদম ফুলের মনকাড়া সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে।

আষাঢ়ে সেই শুকিয়ে যাওয়া জীবনে করুণাধারায় নেমে আসা বৃষ্টি

নববানী নিউজ ডেস্ক

ওগো জলের দেশের কন্যা 
কাননে- কাননে, কদম -কেশর ঝরিছে প্রভাত হতে ।
সূর্য থেকে আগুন-ঝরা তাপে ধরণী যখন উত্তপ্ত হয়, পৃথিবীর ফসলভরা মাঠ তখন রিক্ত। আষাঢ়ে সেই শুকিয়ে যাওয়া জীবনে করুণাধারায় নেমে আসে বৃষ্টি। মেঘ যেন এক কৃষ্ণবর্ণ বিশালদেহী গম্ভীর পুরুষ। তার বৃষ্টি-ঔরসে পৃথিবীর বুকে সৃষ্টির বীজ বপন হয়। নদী-নালা ভরে ওঠে। গাছপালা সজীব হয়। আমাদের পৃথিবী-মা যেন সত্যি ঋতুমতী হয়ে ওঠেন।
অসংখ্য নদনদী বিধৌত পলিমাটির এই ভূমিতে বর্ষাকাল আশীর্বাদ স্বরূপ । এ সময়ে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয় গ্রাম বাংলার প্রকৃতি খাল বিল নদীনালা ভোরে উঠে কানায় কানায়। নৌকা হয়ে ওঠে মানুষের নিত্যদিনের বাহন। শাপলা পদ্ম কলমি ফুলে ছেয়ে যায় বিল ঝিল গাঢ় সবুজের মোহনায় যেন প্রাণ ফিরে পায় বন বনানী কেয়া কামিনী হিজল তমাল জারুল বকুল সোনালু সহ নানা বন্য ফুলে শোভিত হয় চারপাশ।
 বৃষ্টি ভেজা কদম ফুলের মনকাড়া  সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতে উৎসব মুখর হয়ে উঠে গ্রামগুলো। টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ মনের গহীনে এক অদ্ভুত উদাসী সূচনা করে গ্রামীণ জনজীবনে বর্ষা যেন এক অখণ্ড অবসর গ্রামের মানুষেরা এ সময় গল্প-গুজব ও লুডু চাপাতিসহ নানা ধরনের গ্রামীণ খেলায় অলস সময় পার করে কর্দমাক্ত মাঠে দামাল ছেলেদের ফুটবল হাডুডু গোল্লাছুট, বাড়ির আঙ্গিনায় শিশুদের মেঘের ছোঁয়া সহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলা বর্ষার আনন্দ বাড়িয়ে দেই অনেক।
আবহমানকাল ধরে বাংলার প্রকৃতিতে বারবার ফিরে আসে চিরযৌবনা স্বর্গীয় বর্ষা রহস্যময় প্রাণস্পন্দনে জেগে উঠে প্রকৃতির এই প্রাণ সম্পদ মানুষের মাঝে এক অকৃত্রিম আবেগি মনের দুয়ারে।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ভাষায়,
আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন ছল ছল,
বেণু-বনে বায়ু নারে এলোকেশ মন যেন চায় কারে ।
করণা মহামারীর এ দুর্যোগকালীন সময়ে বর্ষাকাল হয়তো বাংলার মানুষের মনে সেই হৃদয় স্পর্শী আবেগ-অনুভূতি জমাতে পারবে না ।তবুও প্রকৃতির অমোঘ আহবানে পৃথিবীতে নতুন প্রাণের মঙ্গল বার্তা নিয়ে বর্ষা আসবে। এই বর্ষার শুদ্ধ শোনানো হোক অকোষীয় জীবাণু করণা, মুক্ত হোক ধরণী, ভালবাসা আর আবেগ অনুভূতিতে ভরে উঠুক জীবন করুণাময় স্রষ্টার কাছে এমনটাই প্রার্থনা  ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় লিখেছেন,
নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে॥ কালিমাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ্‌ চাহি রে॥
সূর্য আষাঢ় মাসে যে দিন মিথুন রাশিতে আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদে গমন করে, সেই সময় থেকে মাতৃস্বরূপা পৃথিবী ঋতুমতী হন। ‘অষ্টবিংশতি তত্ত্ব’ নামের রঘুনন্দন ভট্টাচার্যের গ্রন্থে অম্বুবাচী সম্পর্কে এমন বর্ণনাই দেওয়া হয়। এক সময় বাংলার ঘরে ঘরে বিধবা মা-ঠাকুমারা অম্বুবাচীর দিনক্ষণমনে রাখার জন্য এক প্রবাদের জন্ম দিয়েছিলেন— ‘কিবা বার কিবা তিথি, আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী তিথি’।

পৃথিবী ঋতুমতী হল। কাজেই সেই সময় ‘রজস্বলা’ পৃথিবীর সব নদীরা। তাই বর্ষার সময় নদীর জল কোনও কাজে ব্যবহার করা হয় না। পৃথিবীর বুকে হাল চালানো হয় না। এমন বিশ্বাস বহু যুগ ধরে মানুষ নিয়ে বেঁচে আছে।

মানুষ কি নদী হয়ে যায়? না কি নদীর স্মৃতিতে জড়িয়ে বেঁচে থাকে আসলে মানুষেরই গল্প? সব গল্পই আসলে নদীমাতৃক সভ্যতায় নদীর অপমানের গল্প। শুধু নদী নয়, বৃক্ষ, অরণ্য-সহ সমস্ত পরিবেশের প্রতি অকৃতজ্ঞতার গল্প। মানুষ যে নদীর জল পান করে, যার আশ্রয়ে শস্য ফলিয়ে জীবনধারণ করে, তাকেই কলুষিত করতে দ্বিধা করে না। একা বয়ে চলা দুঃখী নদী যখন অশ্রুমতী হয়, দু’কূল ছাপিয়ে ভাসিয়ে নেয় চরভূমির সাজানো ঝুলন-সভ্যতা।

জনপ্রিয় সংবাদ

আশুলিয়ায় সরকারি জলাশয় থেকে মাছ চুরির চেষ্টার অভিযোগ।

    বৃষ্টিভেজা বর্ষায় কদম ফুলের মনকাড়া সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে।

আষাঢ়ে সেই শুকিয়ে যাওয়া জীবনে করুণাধারায় নেমে আসা বৃষ্টি

আপডেট সময় ০৮:৪০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুন ২০২২
ওগো জলের দেশের কন্যা 
কাননে- কাননে, কদম -কেশর ঝরিছে প্রভাত হতে ।
সূর্য থেকে আগুন-ঝরা তাপে ধরণী যখন উত্তপ্ত হয়, পৃথিবীর ফসলভরা মাঠ তখন রিক্ত। আষাঢ়ে সেই শুকিয়ে যাওয়া জীবনে করুণাধারায় নেমে আসে বৃষ্টি। মেঘ যেন এক কৃষ্ণবর্ণ বিশালদেহী গম্ভীর পুরুষ। তার বৃষ্টি-ঔরসে পৃথিবীর বুকে সৃষ্টির বীজ বপন হয়। নদী-নালা ভরে ওঠে। গাছপালা সজীব হয়। আমাদের পৃথিবী-মা যেন সত্যি ঋতুমতী হয়ে ওঠেন।
অসংখ্য নদনদী বিধৌত পলিমাটির এই ভূমিতে বর্ষাকাল আশীর্বাদ স্বরূপ । এ সময়ে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয় গ্রাম বাংলার প্রকৃতি খাল বিল নদীনালা ভোরে উঠে কানায় কানায়। নৌকা হয়ে ওঠে মানুষের নিত্যদিনের বাহন। শাপলা পদ্ম কলমি ফুলে ছেয়ে যায় বিল ঝিল গাঢ় সবুজের মোহনায় যেন প্রাণ ফিরে পায় বন বনানী কেয়া কামিনী হিজল তমাল জারুল বকুল সোনালু সহ নানা বন্য ফুলে শোভিত হয় চারপাশ।
 বৃষ্টি ভেজা কদম ফুলের মনকাড়া  সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতে উৎসব মুখর হয়ে উঠে গ্রামগুলো। টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ মনের গহীনে এক অদ্ভুত উদাসী সূচনা করে গ্রামীণ জনজীবনে বর্ষা যেন এক অখণ্ড অবসর গ্রামের মানুষেরা এ সময় গল্প-গুজব ও লুডু চাপাতিসহ নানা ধরনের গ্রামীণ খেলায় অলস সময় পার করে কর্দমাক্ত মাঠে দামাল ছেলেদের ফুটবল হাডুডু গোল্লাছুট, বাড়ির আঙ্গিনায় শিশুদের মেঘের ছোঁয়া সহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলা বর্ষার আনন্দ বাড়িয়ে দেই অনেক।
আবহমানকাল ধরে বাংলার প্রকৃতিতে বারবার ফিরে আসে চিরযৌবনা স্বর্গীয় বর্ষা রহস্যময় প্রাণস্পন্দনে জেগে উঠে প্রকৃতির এই প্রাণ সম্পদ মানুষের মাঝে এক অকৃত্রিম আবেগি মনের দুয়ারে।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ভাষায়,
আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন ছল ছল,
বেণু-বনে বায়ু নারে এলোকেশ মন যেন চায় কারে ।
করণা মহামারীর এ দুর্যোগকালীন সময়ে বর্ষাকাল হয়তো বাংলার মানুষের মনে সেই হৃদয় স্পর্শী আবেগ-অনুভূতি জমাতে পারবে না ।তবুও প্রকৃতির অমোঘ আহবানে পৃথিবীতে নতুন প্রাণের মঙ্গল বার্তা নিয়ে বর্ষা আসবে। এই বর্ষার শুদ্ধ শোনানো হোক অকোষীয় জীবাণু করণা, মুক্ত হোক ধরণী, ভালবাসা আর আবেগ অনুভূতিতে ভরে উঠুক জীবন করুণাময় স্রষ্টার কাছে এমনটাই প্রার্থনা  ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় লিখেছেন,
নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে॥ কালিমাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ্‌ চাহি রে॥
সূর্য আষাঢ় মাসে যে দিন মিথুন রাশিতে আর্দ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদে গমন করে, সেই সময় থেকে মাতৃস্বরূপা পৃথিবী ঋতুমতী হন। ‘অষ্টবিংশতি তত্ত্ব’ নামের রঘুনন্দন ভট্টাচার্যের গ্রন্থে অম্বুবাচী সম্পর্কে এমন বর্ণনাই দেওয়া হয়। এক সময় বাংলার ঘরে ঘরে বিধবা মা-ঠাকুমারা অম্বুবাচীর দিনক্ষণমনে রাখার জন্য এক প্রবাদের জন্ম দিয়েছিলেন— ‘কিবা বার কিবা তিথি, আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী তিথি’।

পৃথিবী ঋতুমতী হল। কাজেই সেই সময় ‘রজস্বলা’ পৃথিবীর সব নদীরা। তাই বর্ষার সময় নদীর জল কোনও কাজে ব্যবহার করা হয় না। পৃথিবীর বুকে হাল চালানো হয় না। এমন বিশ্বাস বহু যুগ ধরে মানুষ নিয়ে বেঁচে আছে।

মানুষ কি নদী হয়ে যায়? না কি নদীর স্মৃতিতে জড়িয়ে বেঁচে থাকে আসলে মানুষেরই গল্প? সব গল্পই আসলে নদীমাতৃক সভ্যতায় নদীর অপমানের গল্প। শুধু নদী নয়, বৃক্ষ, অরণ্য-সহ সমস্ত পরিবেশের প্রতি অকৃতজ্ঞতার গল্প। মানুষ যে নদীর জল পান করে, যার আশ্রয়ে শস্য ফলিয়ে জীবনধারণ করে, তাকেই কলুষিত করতে দ্বিধা করে না। একা বয়ে চলা দুঃখী নদী যখন অশ্রুমতী হয়, দু’কূল ছাপিয়ে ভাসিয়ে নেয় চরভূমির সাজানো ঝুলন-সভ্যতা।