বেল গাছের অসুখ। বেল গাছ ‘আঠা ঝড়া’ বা ‘গামোসিস’ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। সম্প্রতি রাজশাহীতে ছয়জন কৃষকের ২০টি বেল গাছে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা চালানো হয়েছে। তাতে ফলাফল ভাল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্ভিদ চিকিৎসকরা বলছেন, বেলের গাছের কাণ্ড বা মোটা ডালের কিছু জায়গা থেকে প্রথমে হালকা বাদামী বা গাঢ় বাদামী আঠা বা রস বের হতে দেখা যায়। বেশি আক্রান্ত হলে পুরো ডালটি এমনকি পুরো গাছটি মারা যায়।
তারা আরো জানান,আক্রান্ত গাছে সুষম মাত্রায় জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা এবং নিয়মিত সেচ প্রদান করা। আঠা ঝড়া দেখামাত্র কিছুটা সুস্থ অংশসহ বাকল-ছাল তুলে ফেলা এবং কর্তিত অংশে বোর্দো মিশ্রণ বা কপার অক্সিক্লোরাইট জাতীয় ছত্রাক নাশক কুপ্রাভিট ৭ গ্রাম/লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। এছাড়া আঠা বের হওয়া স্থানের একটু দূর দিয়ে বাকল তুলে ‘আলকাতরা’ দেওয়া। তুলনামূলক আলকাতরার ফলাফল ভাল।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের অংশহিসেবে বেল গাছের এই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়েছে। রাজশাহী নগরীর বুধপাড়া, পশ্চিম বুধপাড়া, মৌলভী বুধপাড়া, মোহনপুর ও কিসমত কুখুন্ডি এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির বাগান বা বাড়ির আশে-পাশের বেল গাছগুলো দেখা হয়েছে। এরমধ্যে যে বেল গাছগুলো এই রোগে আক্রন্ত হয়েছে। সেগুলোসহ আশে-পাশের বেলগাছগুলোকেও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নগরীর পশ্চিম বুধপাড়ার আমজাদ হোসেন আক্কাসের ১২টা গাছে এই রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে আমজাদ হোসেন আক্কাস জানান, ‘তাদের চিকিৎসা দেওয়ার পরে গাছগুলো ভাল আছে। তারা নিয়মিতই গাছগুলো দেখে যায়। এছাড়া বিভিন্ন মেডিসিনের সাথে আলকাতরা দেওয়া হয়ে থাকে। এখন আঠা পড়া রোগ অকেটাই কমে গেছে।’
বুধপাড়া এলাকার আলমঙ্গীর হোসেন জানান, ‘তার একটি বেল গাছ রয়েছে। বেশ কিছুদিন থেকে রাজশাহীর শ্যমপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের লোকজন এসে গাছের চিকিৎসা দিয়ে গেছে। গাছের গোড়া খুরে সার দিয়েছে। তাতে আঠা পড়া না কমলেও কুকড়া পাতাগুলো সাট হয়েছে। এছাড়া গাছ সতেজ লাগছে।’
রাজশাহী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও এই প্রকল্পের গবেষক ড. সাইয়েদুর রহমান জানান, এটি একটি প্রকল্প। এর আওতায় রাজশাহী নগরীর পাঁচটি এলাকায় ২০টি বেল গাছের ‘বেলের আঠা ঝড়া’ বা ‘গামোসিস’ রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাতে ফলাফল ভাল। আসা করছি এই রোগ সারানো সম্ভব।
তিনি বলেন, বেল খুব ভাল ফল। আমাদের দেশে গাছ থেকে শুধু বেল খাওয়া হয়। কিন্তু গাছের যত্নে কোন ধরনের পরিচর্যা করা হয়। ফলে নানা রোগ বাসা বেধেছে বেল গাছে। বর্তমানে বেল গাছের ‘গামোসিস’ রোগ বেশি হচ্ছে। আমরা এই রোগের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছি।