রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের আলিপুর জামে মসজিদের খতিব ( ইমাম) মাদক সম্রাট মাও. মোঃ জাকির হোসেন (৪০), ৩১০ গ্রাম উন্নতমানের হেরোইনসহ হাতেনাতে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি গোদাগাড়ী উপজেলায় টক অফ দ্যা কান্টিতে পরিনত হয়েছে। তার হেরোইনসহ গ্রেফতার এর হট নিউজ ছবিসহ পত্রিকায় প্রকাশের পর মূর্হতেই ভাইরাল হয়ে যায়। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের তীব্র নিন্দা ও ঝড় উঠেছে।
জানা গেছে, গত রবিবার নাটোর জেলার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মাও. জাকির হোসেনকে ৩১০ গ্রাম হেরোইনসহ হাতেনাতে প্রেফতার করেন। নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফরহাদ হোসেন এর সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার হয়। সাথে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। কেউ লিখেছেন লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু, ইমাম যদি মাদক ব্যবসা করে তবে কার পিছনে নামাজ পড়বো। যারা কুরআন হাদীসের আলোকে মানুষকে আলোর পথ দেখাবেন তারাই যদি মাদক ব্যবসা করে অন্ধকারে ডুবে থাকেন, তবে কার নিকট ইসলাম নিরাপদ হতে পারে এমন প্রশন অনেকরই।
মাও. জাকির হোসেনকে মাদকসহ আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব। গত রবিবার ২৯ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে নাটোর উপজেলার বনপাড়া বাইপাস নামক স্থানে গোয়েন্দা তথ্যের ভিক্তিতে জাকির হোসেনের দেহ তল্লাশী করে ৩১০ গ্রাম হেরোইনসহ তাকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আটককৃত ব্যক্তি (জাকির) হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানীনগর এলাকার লোকমান হোসেনের ছেলে। তার পিতা লোকমান হোসেন রানিনগর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে বাইপাস নামক স্থানে দেহ তল্লাশী করে হেরোইন উদ্ধার করা হয়। এসময় তিনি জন সম্মুখে স্বীকার করেন এবং জব্দকৃত হেরোইনগুলি তিনি বিক্রির জন্য নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন। দীর্ঘ দিন থেকে তারা পারিবারিকভাবে মাদক ব্যবসা করে আসছেন বলে জানা যায় ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জাকির হোসেন গোদাগাড়ী পৌরসভার সামনে দারুল উসুয়া কেজি স্কুল নামে একটি স্কুল পরিচালনা করেন। তার পূর্বে তিনি পৌর সদরে ২টি মসজিদে ইমামতি ও করেছেন।
মাদকসহ গ্রেফতার হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার আলিপুর মহল্লার জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন । দীর্ঘদিন মাদক ব্যবসার আড়ালে তিনি দারুল উসুয়া স্কুলটি পরিচালনা করেছেন এবং গোদাগাড়ী আমতলা নামক স্থানে একটি বিলাসবহুল বাড়ী ক্রয় করেছেন। তাছাড়া গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে ফাজিলপুর জামে মসজিদের পাশে জমি ক্রয় করে আরও একটি বাড়ী নির্মান করেছেন।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা কয়েক ভাই চর রাণীনগর থেকে এসে বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গেড়ে ইমামতি করার যোগ্যতা থাকলেও মাদক ব্যবসা আড়াল করতেই লেবাসধারি ইমামের পথ বেছে নিয়েছেন। মাদক ব্যবসা করে দিনে দিনে অল্প সময়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, তার পর বটবৃক্ষ হচ্ছেন। মূলত মাদক ব্যবসায় সমস্যা হওয়ার কারণে তিনি ইমামতি থেকে ছুটি নিয়ে ঘন ঘন নাটোর, পাবনা, ঢাকা, বরিশাল, সিলেট ও ভারতে গমন করতেন। ওই কেজি স্কুলের সহকারি শিক্ষক হিসেবে আছেন তারই আপন ভাই এবং তার স্ত্রী। সেখানে মাদক ক্রয় বিক্রয় হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তার আর এক ভাই মাও. হাফিজুর রহমান গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে ফাজিলপুর জামে মসজিদের খতিব ( ইমাম) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় দেড় বছর আগে জেএমবি ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতার আভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর হাতে গ্রেফতার হন। দীর্ঘ ৫ মাস কারা ভোগের পর ছাড়া পান ।
লেবাসধারী মাদক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের ছোট ভাই খালিদুজ্জামান কাউসার মহিশালবাড়ী শাহ সুলতান রহ. কামিল মাদ্রাসার ফাজিলের ছাত্র ও গোদাগাড়ী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মহিশালবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। পাঁচ বছর ধরে সে এখানে বসবাস করছেন। প্রকৌশলী গোলাম মোস্তেফা ও খাতিজা খাতুনের বাড়ীতে ভাড়া থাকলেও বর্তমানে ১৫ লক্ষাধিক টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে বাড়ী নির্মান করেছেন। বাড়ীতে হোন্ডা, রাজকীয় আসবাবপত্র রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। হোন্ডাসহ ১৫ লক্ষাধিক টাকা সম্পদ রয়েছে তার । ছাত্র জীবনে নাম মাত্র মাসিক ৮/১০ হাজার টাকার বেতনে ইমামতি করে এত অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি । তার ভাই মাদকসহ গ্রেফতারের পর কানাঘুষা শুরু হয়েছে। তাকেও মানুষ মাদক ব্যবসায়ী মনে করছেন। অনেক মুসল্লী তাকে ঘৃণা করে মসজিদ ত্যাগ করে , পাশ্ববর্তী মসজিদে নামাজ আদায় করছেন ও বড় বড় দানও দিচ্ছেন।
গোদাগাড়ীতে মাদকের ছড়াছড়িতে রীতিমত হতাশ গনমাধ্যমকর্মী ও সাধারণ মানুষ । ইমামের হেরোইন ব্যবসার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আলেম সমাজসহ সবাইকে ভাবিয়া তুলেছেন। কখনও কল্পনা করতে করা যায়নি যে তারা এ ধরনের কার্যকলাপের সহিত জড়িত হতে পারে। গোদাগাড়ীর এক জামে মসজিদের খতিব বলেন, এধরনের মাদক ব্যবসায়ী ইমামদের কারণে ইমামেরা অসম্মানিত হচ্ছেন, বিতর্কিত হচ্ছেন। মানুষ বিষটি নিয়ে নানাভাবে ট্রিট করছেন। এদের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। যেন আর কোন লেবাসধারি মাদক ব্যবসায়ী হতে না পারে। আর মসজিদ কমিটির উচিৎ যোগ্যতা অনুয়ায়ী সনদপত্র যাচাই বাছাই করেই ইমাম ও খতিব নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কম বেতনে ইমামতি করতে রাজি হন এধরনের মাদক ব্যবসায়ী কথিত ইমামগন।
মাদক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের ছোট ভাই খালিদুজ্জামান কাউসার বলেন, আমি ইমামতি করে সৎভাবে জীবন যাপন করছি। আমার হোন্ডা ও সম্পদ দেখে মানুষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
এ ব্যাপারে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমরা (গোদাগাড়ী) থানা পুলিশ কোন মাদক ব্যাবসায়ী বা জেএমবি’র সদস্যকে কোন প্রকার ছাড় দেবে না । সঠিক তথ্য প্রমান পেলেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
প্রধান মন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স ঘোষনা করলেও মুক্ত হয়নি গোদাগাড়ীর মাদক। ফুলে ফেঁপে বড় হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। মাদক ব্যবসায়ী তালিকা বেশ বড় হচ্ছে , বিভিন্ন পেশার মানুষ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। গোদাগাড়ীর তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করেন।