রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নামে বছরে কোটি টাকা চাঁদা তুলে লুটে-পুটে খাওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ইউনিয়নের নেতাদের এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জনি। সোমবার বিকেলে মহানগরীর একটি কনভেনসন সেন্টারে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে আদায়কৃত টাকা লুটপাট করা, জমি বিক্রি করে অর্থ লোপাট করাসহ নানা অভিযোগ তোলেন কোষাধ্যক্ষ জনি।
সংবাদ সম্মেলনে জহুরুল ইসলাম জনি জানান, তিনি রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ ও রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির দপ্তর সম্পাদক। কিন্তু মোট শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁকে দিয়ে ব্যাংকের চেক স্বাক্ষর আর ভাউচার স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয় শুধু। তাঁর কাছে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব আছে। যেখানে আয় কোটি কোটি টাকা হলেও শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকি জমার খাতায় টাকা জমা করা হচ্ছে না।
হাজারও শ্রমিকদের টাকা আত্মসাতের খেলায় মেতেছেন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ১৯ কাঠা জমি কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি করা হলেও শ্রমিকদের বলা হয়েছে ১৬ কাঠা বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু সেই টাকারও কোনো হদিস নাই। গাড়ির লাইন গোপনে বিক্রি করা হয়েছে লাখ লাখ টাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, প্রতিদিন রাজশাহীর ১৯০-২০০ টি মিনি বাস থেকে আঞ্চলিক কমিটির নামে ২০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। রাজশাহী-ঢাকার কোচ থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলা হলেও জমার খাতায় শূন্য। রাজশাহী-ঢাকার লোকাল গাড়ি থেকে ২৪০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। কিন্তু জমা হয় মাত্র ১০০ টাকা। গত বছরের ৮ নভেম্বর ৩১০ টাকা করে তোলা হচ্ছে। তার পরেও জমা হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা করে। পঙ্গু অসহায় শ্রমিকদের নামে ৩০ টাকা করে তোলা হয়। কিন্তু সেটিও খাতায় জমা হয় না। বগুড়া ও রংপুরের গাড়ি থেকে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে তোলা হয়। কিন্তু হিসেবের খাতায় জমা হয় না।
এছাড়াও ১০১ জন শ্রমিকের নামে ৩০ টাকা তোলা হয়। কিন্তু জমার খাতায় ২০ টাকা করে জমা হয়। এভাবে প্রায় চার হাজার শ্রমিকদের নিকট ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাসিক ৩০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হলেও এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকাও জমা করা হয়নি। অথচ প্রতি বছরে ১২ লক্ষ ৩১ হাজার ২০০ টাকা করে জমা হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতিদিন রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের হাজার হাজার টাকা আয় হলেও অফিস সহকারী পারভেজ সেগুলো বিলি-বন্টন করেন নেতাদের হাতে। কোষাধ্যক্ষ জানতেই পারেন না সেই টাকার হিসাব। তবে প্রতিদিন চা-নাস্তার বিল করা হয় ৬ হাজার। কিন্তু শ্রমিকদের চিকিৎসা, সাহায্য ও অন্যান্য খরচ দেখিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা হলেও সেই টাকা সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী নেতৃত্বে লুটপাট করা হয়।
এভাবে বছরের পর বছর ধরে রাজশাহীতে মোটর শ্রমিকদের নামে চাঁদা উত্তোলনকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে। অখচ শ্রমকি-কর্মচারীদের ৯ মাসের বেতন-ভাতা বাকি রয়েছে। আবার ২০০-২৫০ জন শ্রমিকের কণ্যাদায়, ৫০-৭০ জনের মৃত্যুর এককালীন টাকা, ৩০-৪০ জনের শিক্ষা ভাতা বাকি রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জনি বলেন, এসবের প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। আমার পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। তার পরেও শ্রমিকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে আমি এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছি। আমি এই অনিয়মের বিচার চাই।’
তবে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিকি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমি আমার নিজের অর্থ শ্রমিকদেরকে দিয়ে থাকি। কোনা টাকা লুটপাটের সুযোগ নাই। যা আয় হয়েছে, সব জমা করা হয়েছে। আয়-ব্যয়ে কোনো দুর্নীতি হয় না।