Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
রাজশাহী রেশম বানিজ্যের ঐতিহাসিক বড়কুঠি
ঢাকা ০৯:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যদি পেতো একটি মসলিন শাড়ি,সেজে হতো হুরপরী,  শাড়ির সাথে নারী,একথাটা মিশে আছে বিশ্বজুড়ে।

রাজশাহী রেশম বানিজ্যের ঐতিহাসিক বড়কুঠি

  • মোঃ আরিফ হোসেন
  • আপডেট সময় ০৬:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ মে ২০২২
  • ৫২৭ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি

আম বললেও রাজশাহী, সিল্ক বললেও রাজশাহী। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্প যুগে যুগে পরিচিত এই সিল্ক সিটি শহর রাজশাহী। বাণিজ্য মানে যোগাযোগের সহজ পথ, নৌপথ আর নদীর পাড়ে নীলদের স্থাপনা। পদ্মা পাড়ের রাজশাহীও ঠিক সেরকম । রাজশাহীর আম চত্বর থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিনে এই রেশম শিল্পের  কুঠিবাড়ি অবস্থিত। উন্নত সিল্কের  মানের কারণে রাজশাহী রেশম বস্ত্রের  খ্যাতী  এক সময় বঙ্গভূমির সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ছিল দূর-দূরান্তে। সেই মোঘল যুগ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত দেশী-বিদেশী  বণিকদের আনাগোনায় রাজশাহী এক সময় ছিল রেশম বাণিজ্যের উন্নতম  প্রাণকেন্দ্র।

 সোনালী সে সময়ের স্মৃতি বুকে ধরে  আছে রাজশাহী পদ্মা পাড়ের ঐতিহাসিক এই বড়কুঠি। রেসম বাণিজ্যের  কেন্দ্রীয় কুঠি হিসাবে রাজশাহীর বড়কুঠি ইংরেজ বনিকরা ব্যাবহার করেছে উনিশের দশকে। শাড়ি তৈরির রেশম সুতা তৈরী হয় তুত গাছ থেকে। তুত গাছ না থাকলে রেশম সুতা হয়তো তৈরি হতো না। কারণ এই  তুত গাছের পাতা খেয়ে বড় হয় রেশম পোকা।  তুত গাছের পাতা রেশম পোকাদের একমাত্র পছন্দের খাবার। তুত গাছ একটানা ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত পাতা দেই। তুত বাগানের একেকটি গাছ  থেকে প্রতি বছরে পাওয়া যায় ৫৫ থেকে ৭৫ কেজি পাতা। রেশমি কাপড় আগে বানানো হতো (হ্যান্ডলুমে) এখন বেশি বুনানো  হয় সেমি অটো পাওয়ারলুমে । তাঁত যন্ত্রে  কাপড়ের রকমভেদ তৈরি হয়, সুতার সাইজ ও প্রতি ইঞ্চিতে টানা সুতা ও পড়নে সুতার সংখ্যা অনুসারে। প্রিন্টিং এর রংবাহারি সাজে শাড়ি হয় অপরূপা। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রং শিল্পীরা শাড়ি সাজায় রংতুলিতে।   নানা রকমের  রংবাহারে রাজশাহীর  প্রিন্ট শাড়ি নামকরা। গলানো মোম দিয়ে প্রথমে আঁকানো হয় নকশা।
পরে শাড়ির নকশা পূর্ণতা পায় হ্যান্ড প্রিন্টে। হ্যান্ড প্রিন্টে নকশা করা শাড়ির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। সংস্কৃতি ভাষায় রেশমি কাপড়কে বলা হয় অংসুপত্র। আমাদের দেশে অংসুপত্র তিন রকমের- গরদ,তসর,আর মটকা। গরদ সবথেকে সেরা, তসর মাঝারি মানের, আর মটকা তৃতীয়। এই তিন ধরনের কাপড় তৈরি হয় এখানে।
রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন শুধু রেশমি কাপড়ই বানায় না,  কাপড়ের গায়ে গড়ে সূচি শিল্প। সুতার মান ও নকশাতে একেক শাড়ি, একেক দাম। নিজস্ব কারখানা থাকায় রাজশাহীর সিল্ক ফ্যাশনের শোরুমে রকমারি রেশমি শাড়ির বিপুল সমাহার। সারাদেশে বাজারজাত করা হয় এখানকার শাড়ি। রেশম মানেই সুন্দর, মুলায়ন অভিজাত্ত এক বস্ত্র। ঐতিহ্য, সৌন্দর্য, ও সংস্কৃতির সাজ সজ্জার প্রতিক এই রেশম। শাড়ি এমনিতেই খুব আকর্ষণীয় পোশাক, তার সাথে রেশমি হলে তো কথাই নেই। সিল্কসিটি রাজশাহীতে  আসলে দেখা যাবে ঐতিহ্যের বুননে আঁকা রেশম শাড়ির রকমারি বাহার। সুতি বস্ত্র, মসলিন আর রেশম গুনে বাংলার তাঁতিরা যুগে যুগে জয় করেছে বিশ্ববাসীর হৃদয়। গুণী তাঁত শিল্পরা এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে  রাজশাহীর এই রেশম শিল্পকে । বাংলাদেশের মহিলাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের পোশাক শাড়ি। হাতে বুনানো  শাড়ি সারাবিশ্বের মহিলাদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত। রাজশাহীর তাঁতের শাড়ি, সুতির শাড়ি বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। শাড়ি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের  বিমানের পোশাক। এছাড়া দেশের মহিলা রাজনীতিবীদরা সাধারণত শাড়ি পড়ে থাকে।
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী, কিংবদন্তি  এই সিল্ক  এখনো সবার মন কাড়ে রূপের ধারে, ঐতিহ্যের ধারে  ।
জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদীর মাধবদীতে আবাসিক হোটেলে আবারও চলছে অ’বৈধ কার্যকলাপ।

যদি পেতো একটি মসলিন শাড়ি,সেজে হতো হুরপরী,  শাড়ির সাথে নারী,একথাটা মিশে আছে বিশ্বজুড়ে।

রাজশাহী রেশম বানিজ্যের ঐতিহাসিক বড়কুঠি

আপডেট সময় ০৬:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ মে ২০২২

আম বললেও রাজশাহী, সিল্ক বললেও রাজশাহী। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্প যুগে যুগে পরিচিত এই সিল্ক সিটি শহর রাজশাহী। বাণিজ্য মানে যোগাযোগের সহজ পথ, নৌপথ আর নদীর পাড়ে নীলদের স্থাপনা। পদ্মা পাড়ের রাজশাহীও ঠিক সেরকম । রাজশাহীর আম চত্বর থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিনে এই রেশম শিল্পের  কুঠিবাড়ি অবস্থিত। উন্নত সিল্কের  মানের কারণে রাজশাহী রেশম বস্ত্রের  খ্যাতী  এক সময় বঙ্গভূমির সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ছিল দূর-দূরান্তে। সেই মোঘল যুগ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত দেশী-বিদেশী  বণিকদের আনাগোনায় রাজশাহী এক সময় ছিল রেশম বাণিজ্যের উন্নতম  প্রাণকেন্দ্র।

 সোনালী সে সময়ের স্মৃতি বুকে ধরে  আছে রাজশাহী পদ্মা পাড়ের ঐতিহাসিক এই বড়কুঠি। রেসম বাণিজ্যের  কেন্দ্রীয় কুঠি হিসাবে রাজশাহীর বড়কুঠি ইংরেজ বনিকরা ব্যাবহার করেছে উনিশের দশকে। শাড়ি তৈরির রেশম সুতা তৈরী হয় তুত গাছ থেকে। তুত গাছ না থাকলে রেশম সুতা হয়তো তৈরি হতো না। কারণ এই  তুত গাছের পাতা খেয়ে বড় হয় রেশম পোকা।  তুত গাছের পাতা রেশম পোকাদের একমাত্র পছন্দের খাবার। তুত গাছ একটানা ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত পাতা দেই। তুত বাগানের একেকটি গাছ  থেকে প্রতি বছরে পাওয়া যায় ৫৫ থেকে ৭৫ কেজি পাতা। রেশমি কাপড় আগে বানানো হতো (হ্যান্ডলুমে) এখন বেশি বুনানো  হয় সেমি অটো পাওয়ারলুমে । তাঁত যন্ত্রে  কাপড়ের রকমভেদ তৈরি হয়, সুতার সাইজ ও প্রতি ইঞ্চিতে টানা সুতা ও পড়নে সুতার সংখ্যা অনুসারে। প্রিন্টিং এর রংবাহারি সাজে শাড়ি হয় অপরূপা। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে রং শিল্পীরা শাড়ি সাজায় রংতুলিতে।   নানা রকমের  রংবাহারে রাজশাহীর  প্রিন্ট শাড়ি নামকরা। গলানো মোম দিয়ে প্রথমে আঁকানো হয় নকশা।
পরে শাড়ির নকশা পূর্ণতা পায় হ্যান্ড প্রিন্টে। হ্যান্ড প্রিন্টে নকশা করা শাড়ির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। সংস্কৃতি ভাষায় রেশমি কাপড়কে বলা হয় অংসুপত্র। আমাদের দেশে অংসুপত্র তিন রকমের- গরদ,তসর,আর মটকা। গরদ সবথেকে সেরা, তসর মাঝারি মানের, আর মটকা তৃতীয়। এই তিন ধরনের কাপড় তৈরি হয় এখানে।
রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন শুধু রেশমি কাপড়ই বানায় না,  কাপড়ের গায়ে গড়ে সূচি শিল্প। সুতার মান ও নকশাতে একেক শাড়ি, একেক দাম। নিজস্ব কারখানা থাকায় রাজশাহীর সিল্ক ফ্যাশনের শোরুমে রকমারি রেশমি শাড়ির বিপুল সমাহার। সারাদেশে বাজারজাত করা হয় এখানকার শাড়ি। রেশম মানেই সুন্দর, মুলায়ন অভিজাত্ত এক বস্ত্র। ঐতিহ্য, সৌন্দর্য, ও সংস্কৃতির সাজ সজ্জার প্রতিক এই রেশম। শাড়ি এমনিতেই খুব আকর্ষণীয় পোশাক, তার সাথে রেশমি হলে তো কথাই নেই। সিল্কসিটি রাজশাহীতে  আসলে দেখা যাবে ঐতিহ্যের বুননে আঁকা রেশম শাড়ির রকমারি বাহার। সুতি বস্ত্র, মসলিন আর রেশম গুনে বাংলার তাঁতিরা যুগে যুগে জয় করেছে বিশ্ববাসীর হৃদয়। গুণী তাঁত শিল্পরা এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে  রাজশাহীর এই রেশম শিল্পকে । বাংলাদেশের মহিলাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের পোশাক শাড়ি। হাতে বুনানো  শাড়ি সারাবিশ্বের মহিলাদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত। রাজশাহীর তাঁতের শাড়ি, সুতির শাড়ি বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। শাড়ি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের  বিমানের পোশাক। এছাড়া দেশের মহিলা রাজনীতিবীদরা সাধারণত শাড়ি পড়ে থাকে।
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী, কিংবদন্তি  এই সিল্ক  এখনো সবার মন কাড়ে রূপের ধারে, ঐতিহ্যের ধারে  ।