সম্প্রতি সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন বলিউডের হার্টথ্রব অভিনেতা রণবীর কাপুর এবং তার অভিনেত্রী-প্রেমিকা আলিয়া ভাট। ঋষি কাপুর ও নীতু কাপুরের ছেলের সঙ্গে মহেশ ভাট ও সোনি রাজদানের মেয়ের বিয়েতে কাছাকাছি এসেছে কাপুর ও ভাট পরিবার। কিন্তু দুই পরিবারের এমন দুই সদস্য আছেন, যাদের শত্রুতা এখনো যায়নি।
সেই দুজনের শত্রুতা কয়েক দশক পুরনো। কথাবার্তা তো দূর অস্ত, মুখ দেখাদেখিও বন্ধ ছিল এই দুজনের। এমনকি, সংবাদমাধ্যমের কাছে একে অপরের পরিবারকে তুলোধুনাও করেছিলেন তারা। সেই দুজন আর কেউ নন, রণবীরের তুতো দিদি অভিনেত্রী কারিশমা কাপুর এবং আলিয়া ভাটের সৎ দিদি অভিনেত্রী পূজা ভাট।
নব্বইয়ের দশকে এই দুই নায়িকার রেষারেষি চরমে পৌঁছেছিল। সে সময় পরিবারের ছেলেদের সিনেমার পর্দায় অবাধ বিচরণ থাকলেও কাপুর পরিবারের মেয়েদের সিনেমার জগতে পা রাখায় বিশেষ নিষেধাজ্ঞা ছিল। কারিশমা কাপুরের মা ববিতা একপ্রকার জোর করেই মেয়েকে সিনেমার জগতে নিয়ে আসেন।
তবে সিনেমা জগতে পা রেখে সঙ্গে সঙ্গেই সাফল্যের মুখ দেখেননি কারিশমা। ক্যারিয়ারের শুরুতেই বেশ কিছু অসফল সিনেমা তার ঝুলিতে এসে পড়েছিল। কারিশমা সমসাময়িক সিনেমা মহলে পরিচিত আরও এক পরিবারের মেয়ে তখন বলিউডপাড়ায় পা রাখেন। তিনি পরিচালক-প্রযোজক মহেশ ভাটের প্রথম পক্ষের মেয়ে পূজা ভাট।
তবে কারিশমার মতো প্রথম দিকে ধাক্কা খেতে হয়নি পূজাকে। এক-দুইটি সিনেমা করার পর থেকেই তিনি বলিউডের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ১৯৯১ সালে আমির খানের বিপরীতে ‘দিল হ্যায় কে মানতা নাহি’ সিনেমার সাফল্যের পরই তিনি ‘হিট’ নায়িকার তকমা পান। এরপর সঞ্জয় দত্তের বিপরীতে ‘সড়ক’ সিনেমাতে অভিনয় করেন পূজা।
এই সিনেমাটিও বক্স অফিসে চরম সাফল্যের মুখ দেখে। ১৯৯১ সালেই বলিউডে পাকাপাকি জায়গা করে নেন পূজা। একই সময়ে কারিশমার একের পর এক সিনেমা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ছিল। বলিউডপাড়ার পরিচিত পরিবারের সদস্য হওয়ার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিনিয়ত তুলনা করা হতো পূজা ও কারিশমার মধ্যে।
একবার এক সাক্ষাৎকারে পূজাকে জিজ্ঞাসা করা হয়ছিল, কারিশমা কেন অভিনেত্রী হিসেবে সফল হতে পারছেন না? জবাবে পূজা বলেছিলেন, কারিশমার মা-বাবা আলাদা থাকেন। ফলে ও কাজে মন দিতে পারছে না। এছাড়া কারিশমার মা তার সমস্ত কাজে ‘নাক গলান’। তার মায়ের কারণেই কারিশমা অভিনেত্রী হিসেবে সফল হতে পারছেন না।
সে সময় এ কথা সত্যিই প্রচলিত ছিল যে, কারিশমা কোন সিনেমা করবেন বা কী পোশাক পরবেন, তা তার মা ববিতা নিজেই ঠিক করতেন। ববিতার এই অভ্যাসের জন্য অনেক পরিচালকই কারিশমার সঙ্গে কাজ করতে রাজি ছিলেন না বলেও কানাঘুষা ছিল। তার পরও পূজার সাক্ষাৎকার দেখে অগ্নিশর্মা হয়েছিলেন কারিশমা। ছেড়ে কথা বলেননি পূজাকে।
এক সাক্ষাৎকারে পূজা এবং তার পরিবারকে দু’কথা শুনিয়ে তবেই শান্ত হন কারিশমা। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের সম্পর্কে যে কথা রটানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য। আমার মা আমার কাজ নিয়ে নাক গলান না। আমার মা অন্য অভিনেত্রীদের মায়েদের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। পূজা আমার মা-বাবার আলাদা থাকা নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেগুলো আমার একদমই ভালো লাগেনি। ওর কী অসুবিধা, আমি বুঝতে পারছি না।’
কারিশমা আরও বলেন, আসলে পূজার মা-বাবার মধ্যেই কোনো সমস্যা আছে এবং পূজা নিজেই তার বাবা-মায়ের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি, পূজার মা কিরণ ভাটের সঙ্গে মহেশ ভাটের সম্পর্কে ফাটল এবং মহেশের সঙ্গে সোনি রাজদানির সম্পর্কের প্রসঙ্গও তুলে আনেন কারিশমা। পূজা নিজের সমস্যার কথা তার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বলেও কারিশমা দাবি করেন।
তবে কারিশমা এও জানান, মহেশ ভাটের পরিচালনায় অভিনয় করার ইচ্ছা রয়েছে তার। তিনি মহেশকে খুব সম্মান করেন। তাই তিনি কারও সম্পর্কে খারাপ কথা বলতে চান না। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, তার লালনপালন যথেষ্ট ভালো ভাবে হয়েছে। তাই তিনি কারও পরিবার সম্পর্কে কোনো খারাপ কথা বলতে চান না।
যে সংবাদমাধ্যমে পূজার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল, তাদেরও দুই-চার কথা শোনাতে ছাড়েননি কারিশমা। পরবর্তীতে কারিশমার সাক্ষাৎকার প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দুই অভিনেত্রীর মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়ে যায়। মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়।
কোনো পরিচালকই কারিশমা ও পূজাকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার সাহস দেখাননি। একবার শুধু একটি পত্রিকার প্রচ্ছদের ছবির জন্য দুজনকে একসঙ্গে কাজ করতে দেখা যায়। তবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরও দুই অভিনেত্রী রাবিনা ট্যান্ডন ও ঊর্মিলা মাতন্ডকর। তাই কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েনি পত্রিকা কর্তৃপক্ষ।
এত বছর পর রণবীর-আলিয়ার বিয়েতেও একে অপরকে এড়িয়ে যান পূজা ও কারিশমা। বোঝা যায়, তাদের শত্রুতা এখনো শেষ হযনি। তবে দুজনের জীবনে কিছু মিলও রয়েছে। কারিশমা এবং পূজা দুজনেই খুব তাড়াতাড়ি অভিনয় জগৎ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। পাশাপাশি, তাদের দুজনেরই বিবাহিত জীবন সফল হয়নি।