রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার লক্ষীপুর মোড়ে আবাসিক হোটেল ড্রিম হ্যাভেনে নারী খুনের ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে আরএমপি’র রাজপাড়া থানা পুলিশ। সেইসাথে খুনের ঘটনায় জড়িত ঘাতককে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃত হলো মো: মিঠুন আলী (২৮)। সে নাটোর জেলার সদর থানার আগদিঘা গ্রামের মো: মকবুল হোসেনের ছেলে।
আজ ১৯ এপ্রিল ২০২২ দুপুর ১২ টায় আরএমপি সদরদপ্তর কনফারেন্স রুমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত পুলিশ কমিশনার জনাব মো: আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয় এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল ২০২২ রাত সাড়ে ১০ টায় রাজপাড়া থানার লক্ষীপুর মোড়ের ড্রিম হ্যাভেন হোটেলের ম্যানেজার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাজপাড়া থানা পুলিশকে জানায়, তার হোটেলের একটি রুমে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকলেও ভিতরে একজন মহিলা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে।
উক্ত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে রাজপাড়া থানা পুলিশের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তালাবদ্ধ ৪র্থ তলার ৪০৩ নম্বর রুমে তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে একজন অজ্ঞাত মহিলাকে খাটের উপর অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়। নারী পুলিশ অফিসারের সহায়তায় পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারে, সে বেশ কয়েক ঘন্টা পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছে।
পরবর্তীতে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটের সহযোগিতায় রাজপাড়া থানা পুলিশ অজ্ঞাতনামা মহিলার নাম ঠিকানা সনাক্ত করা-সহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করে। মৃতের পরিচয় নিশ্চিত করে মৃত জয়নব বেগম(৪০) এর আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে। সংবাদ পেয়ে মৃতের আত্মীয় স্বজন এসে লাশ সনাক্ত করে এবং বড় ভাই মো: তছলেম প্রামানিক (৪৫) বাদী হয়ে রাজপাড়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
মামলা রুজু পরবর্তীতে আরএমপি’র সম্মানিত পুলিশ কমিশনার জনাব মো: আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় রাজপাড়া থানা পুলিশের একটি টিম মামলার রহস্য উদঘাটন-সহ আসামী সনাক্তপূর্বক গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেন।
পরবর্তীতে উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) জনাব মো: সাজিদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ জনাব মো: জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক জনাব মো: মাইদুল ইসলাম, এসআই কাজল কুমার নন্দী ও তার টিম হোটেলের ভিডিও ফুটেজ এবং রেজিস্টার পর্যালোচনা করেন। পর্যালোচনায় দেখা যায়, হোটেলের পুরুষ রেজিস্টারে মিজানের নাম এবং মহিলা রেজিস্টারে জুলেখার নাম। তাদের উভয়ের ঠিকানা গোদাগাড়ী এবং সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। গত ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০ টায় তারা ড্রিম হ্যাভেন হোটেলের ৪র্থ তলার ৪০৩ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে। একই দিন দুপুর ২ টায় মিজানকে রুমে তালা দিয়ে মুখ আড়াল করে হোটেল ত্যাগ করতে দেখা যায়।
এরপর থানা পুলিশের ঐ টিম আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহযোগিতায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামীর নাম ঠিকানা ও তার অবস্থান সনাক্ত করে। পরবর্তীতে গত ১৮ এপ্রিল ২০২২ রাত সাড়ে ৮ টায় নাটোর জেলার সদর থানার আগদিঘা গ্রামের অভিযান পরিচালনা করে আসামী মো: মিঠুনকে তার নিজ বাড়ী হতে গ্রেফতার করে। এসময় আসামীর ঘর তল্লাশী করে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও অপরাধের সময় পরিহিত পোষাক-সহ অন্যান্য আলামত জব্দ করে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী জানায়, মৃত জয়নব বেগমের সাথে তার ৩ মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। গত দুই সপ্তাহ ধরে জয়নব তাকে বিয়ের জন্য চাপ ও হুমকি প্রদান করে আসছে। তাই সে পূর্ব পরিকল্পনা করে গত ১৭ এপ্রিল ২০২২ জয়নাবকে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে মিথ্যা নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ড্রিম হ্যাভেন হোটেলে উঠে। এরপর সে হোটেল কক্ষে জয়নব বেগমকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে হোটেল কক্ষ থেকে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতাকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।