ঢাকা ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সেখানে চিকিৎসা যেন তার কাছে দুঃস্বপ্ন।

৮৩ বছরের বৃদ্ধার চার হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও মিলেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড।

ফাইল ছবি।

শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া খাতুন নামে ৮৩ বছরের বৃদ্ধা  যেখানে দুই বেলা খাবার জোটানোই কষ্টকর, সেখানে চিকিৎসা যেন তার কাছে দুঃস্বপ্ন। জীবন সায়াহ্নে এসে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়ার আশায় বয়স্ক ভাতার জন্য ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। সাবেক এক ইউপি সদস্যকে চার হাজার টাকা ঘুষও দিয়েছেন তিনি। তবে মিলেছে শুধু আশ্বাস, ‘বিড়ালের’ ভাগ্যে ছিকেও ছেঁড়েনি, জোটেনি একটি বয়স্কভাতার কার্ডও।
একটি ভাঙা ঘরের বাসিন্দা তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৯৩৮ সালের ২ ডিসেম্বর।
সরকারি নিয়মানুযায়ী, বয়স্কভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২, আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী সাফিয়া বয়স্কভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও পাননি কারও সহযোগিতা।

এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাফিয়ার স্বামী আব্দুল জলিল মারা গেছেন প্রায় আট বছর আগে। সহায়সম্পদ বলতে এক খণ্ড বাড়িভিটা ছাড়া তার তেমন কিছুই নেই। সন্তানরা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বৃদ্ধ, অসহায় মায়ের কথা কেউ ভাবে না। তাই এই ৮৩ বছর বয়সে কখনো এক বেলা, কখনো না খেয়ে থাকতে হয় তার। এ ছাড়াও বয়স বেশি হওয়ায় প্রায়ই অসুস্থ থাকেন সাফিয়া। তাই চিকিৎসার জন্য হাত পাততে হয় মানুষের কাছে।

সাফিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী মইরা গেছে আট বছর অইবো। উনি মারা যাওয়ার পর আমি ছেলের কাছে থাকতাম। কিন্তু ছেলের বউ খালি আমার সাথে ঝগড়া করে। তাই অনেক দিন অইলো, ছোট একডা ঝুপড়ি ঘরে একলাই থাহি।

তিনি আরও বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর ম্যালা কষ্টে আছি। অসুখ অইলে ঠিকমতো ওষুধ কিনবার পারি না। একটু খাইয়া-পইরা চলার জন্য ম্যালা দিন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে গেছি। কেউ আমারে সাহায্য করে নাইক্যা। সবশেষ একজনের কাছ থাইক্যা চার হাজার ট্যাহা হাওলাদ কইরা কহিনুর মেম্বাররে দিছি। কহিনুর মেম্বার কইছিল আমার বয়স্ক ভাতার কার্ড কইরা দিবো। ট্যাহা পায়া তার কতা রাহে নাই। পরে ম্যালা বিচার, সালিশ কইরা ট্যাহা কয়ডা ফেরত পাইছি।’

স্থানীয় এলাকার একজন বলেন, ‘এই বৃদ্ধ বয়সে সাফিয়া অনেক কষ্ট করছেন। ওনার ছেলেমেয়েরা তার খোঁজ নেয় না। অনেক সময় ক্ষুধার জ্বালায় লোকলজ্জা ভেঙে সাফিয়া মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে হাজির হন। শুধু এক বেলা খাওয়ার জন্য। তিনি বয়সের ভারে প্রায় কুঁজো হয়ে গেছেন। অসুস্থ হলে বিছানায় পড়ে থাকেন। ডাক্তার দেখাবে, ওষুধ কিনবে, সেটাও তিনি পারেন না। তাই বয়স্কভাতার কার্ডটা হলে ওনার খুব উপকার হতো।’

চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য নিজের প্রতি আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সেদিন আমি বাড়ি ছিলাম না। বৃদ্ধা সাফিয়া জোর করে আমার স্ত্রীর কাছে বয়স্কভাতা কার্ড করে দেওয়ার জন্য চার হাজার টাকা দিয়ে আসে।

এ ব্যাপারে চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘আমি নতুন পাস করে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছি। এত বয়সী একজন বিধবা নারীর যে বয়স্কভাতার কার্ড হয়নি, সেটা আমি জানতাম না। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি আমার কাছে আসেননি। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে তার জন্য একটি বয়স্কভাতার কার্ড ব্যবস্থা করব। এ ছাড়া আমার ইউনিয়নে যদি এ রকম সাফিয়ার মতো আরও কেউ বয়স্কভাতা কার্ড থেকে বঞ্চিত থাকে, তাদের প্রত্যেককে সেটির ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করে দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, ‘ওই বিধবা বৃদ্ধা সাফিয়া সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আবেদন করলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বয়স্কভাতা পাওয়ার মতো উপযুক্ত হলে তাকে অবশ্যই কার্ড করে দেওয়া হবে। এটার জন্য তাকে অন্য কোথাও হয়রানি হতে হবে না।’

জনপ্রিয় সংবাদ

বান্দরবানকে স্মার্ট পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে: ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।

সেখানে চিকিৎসা যেন তার কাছে দুঃস্বপ্ন।

৮৩ বছরের বৃদ্ধার চার হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও মিলেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড।

আপডেট সময় ০৪:০৫:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া খাতুন নামে ৮৩ বছরের বৃদ্ধা  যেখানে দুই বেলা খাবার জোটানোই কষ্টকর, সেখানে চিকিৎসা যেন তার কাছে দুঃস্বপ্ন। জীবন সায়াহ্নে এসে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়ার আশায় বয়স্ক ভাতার জন্য ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। সাবেক এক ইউপি সদস্যকে চার হাজার টাকা ঘুষও দিয়েছেন তিনি। তবে মিলেছে শুধু আশ্বাস, ‘বিড়ালের’ ভাগ্যে ছিকেও ছেঁড়েনি, জোটেনি একটি বয়স্কভাতার কার্ডও।
একটি ভাঙা ঘরের বাসিন্দা তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৯৩৮ সালের ২ ডিসেম্বর।
সরকারি নিয়মানুযায়ী, বয়স্কভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২, আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী সাফিয়া বয়স্কভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও পাননি কারও সহযোগিতা।

এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাফিয়ার স্বামী আব্দুল জলিল মারা গেছেন প্রায় আট বছর আগে। সহায়সম্পদ বলতে এক খণ্ড বাড়িভিটা ছাড়া তার তেমন কিছুই নেই। সন্তানরা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বৃদ্ধ, অসহায় মায়ের কথা কেউ ভাবে না। তাই এই ৮৩ বছর বয়সে কখনো এক বেলা, কখনো না খেয়ে থাকতে হয় তার। এ ছাড়াও বয়স বেশি হওয়ায় প্রায়ই অসুস্থ থাকেন সাফিয়া। তাই চিকিৎসার জন্য হাত পাততে হয় মানুষের কাছে।

সাফিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী মইরা গেছে আট বছর অইবো। উনি মারা যাওয়ার পর আমি ছেলের কাছে থাকতাম। কিন্তু ছেলের বউ খালি আমার সাথে ঝগড়া করে। তাই অনেক দিন অইলো, ছোট একডা ঝুপড়ি ঘরে একলাই থাহি।

তিনি আরও বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর ম্যালা কষ্টে আছি। অসুখ অইলে ঠিকমতো ওষুধ কিনবার পারি না। একটু খাইয়া-পইরা চলার জন্য ম্যালা দিন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে গেছি। কেউ আমারে সাহায্য করে নাইক্যা। সবশেষ একজনের কাছ থাইক্যা চার হাজার ট্যাহা হাওলাদ কইরা কহিনুর মেম্বাররে দিছি। কহিনুর মেম্বার কইছিল আমার বয়স্ক ভাতার কার্ড কইরা দিবো। ট্যাহা পায়া তার কতা রাহে নাই। পরে ম্যালা বিচার, সালিশ কইরা ট্যাহা কয়ডা ফেরত পাইছি।’

স্থানীয় এলাকার একজন বলেন, ‘এই বৃদ্ধ বয়সে সাফিয়া অনেক কষ্ট করছেন। ওনার ছেলেমেয়েরা তার খোঁজ নেয় না। অনেক সময় ক্ষুধার জ্বালায় লোকলজ্জা ভেঙে সাফিয়া মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে হাজির হন। শুধু এক বেলা খাওয়ার জন্য। তিনি বয়সের ভারে প্রায় কুঁজো হয়ে গেছেন। অসুস্থ হলে বিছানায় পড়ে থাকেন। ডাক্তার দেখাবে, ওষুধ কিনবে, সেটাও তিনি পারেন না। তাই বয়স্কভাতার কার্ডটা হলে ওনার খুব উপকার হতো।’

চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য নিজের প্রতি আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সেদিন আমি বাড়ি ছিলাম না। বৃদ্ধা সাফিয়া জোর করে আমার স্ত্রীর কাছে বয়স্কভাতা কার্ড করে দেওয়ার জন্য চার হাজার টাকা দিয়ে আসে।

এ ব্যাপারে চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘আমি নতুন পাস করে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছি। এত বয়সী একজন বিধবা নারীর যে বয়স্কভাতার কার্ড হয়নি, সেটা আমি জানতাম না। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি আমার কাছে আসেননি। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে তার জন্য একটি বয়স্কভাতার কার্ড ব্যবস্থা করব। এ ছাড়া আমার ইউনিয়নে যদি এ রকম সাফিয়ার মতো আরও কেউ বয়স্কভাতা কার্ড থেকে বঞ্চিত থাকে, তাদের প্রত্যেককে সেটির ব্যবস্থা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করে দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, ‘ওই বিধবা বৃদ্ধা সাফিয়া সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আবেদন করলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বয়স্কভাতা পাওয়ার মতো উপযুক্ত হলে তাকে অবশ্যই কার্ড করে দেওয়া হবে। এটার জন্য তাকে অন্য কোথাও হয়রানি হতে হবে না।’