![](https://www.nababani.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের একটি দল পথ অবরোধ করে রাখায় দুদিন ধরে পরিষদে যেতে পারছেন না রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা।
সোমবার রাতে নিরাপত্তা চেয়ে গোদাগাড়ী থানায় অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবারও আরেকটি অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। গোদাগাড়ীর পিরিজপুর বাজারে সোহেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লাঠি নিয়ে মিছিল করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরব আলী ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আরব আলীর নেতৃত্বে উপজেলার পিরিজপুরে গত দুদিন ধরে চেয়ারম্যানের পথ অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এ পথেই চেয়ারম্যান পরিষদে যান। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চেয়ারম্যান মঙ্গলবার রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৃথক আবেদন করেছেন। সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা তার সহযোগীদের নিয়ে মঙ্গলবারও চেয়ারম্যানের পথ অবরোধ করে রাখেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করেছেন এলাকাবাসী।
পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, এটা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের রেষারেষির জের। চেয়ারম্যান সোহেল রানা আমাকে ফোন করে ও লিখিতভাবে নিরাপত্তা সহায়তা চেয়েছেন। আপাতত তাকে তার বাড়ি থেকেই পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একজন চেয়ারম্যানের পথরোধ করে পরিষদে যেতে না দেওয়া বা তার ওপর হামলা করা সরকারি কাজে বাধাদানের শামিল। আমি পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নৌকার প্রার্থীর চেয়ে ৯ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সোহেল। এরপর থেকেই এলাকার সংসদ সদস্য (রাজশাহী-১) ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তার আগে এমপি ফারুকের সঙ্গে সোহেল রানার অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। গত ২৫ আগস্ট বিদিরপুর হাইস্কুল মাঠে জাতীয় শোক দিবসের সভায় এমপি ফারুক সোহেলের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় বিষোদগার করেন। সোহেল চেয়ারম্যানকে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে দেবেন না বলেও হুঙ্কার দেন এমপি।এমপির এ ধরনের ভাষণের পর থেকে এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে গত ২৫ আগস্ট রাতে এমপি ফারুকের বক্তব্যের একটি ভিডিওসহ তার ফেসবুক পেজে পোস্ট শেয়ার করে সোহেল রানা জনগণের উদ্দেশ্যে লেখেন- আপনারাই বিচার করুন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরব আলী ২০ লাখ টাকায় কিলার ভাড়া করে সোহেল রানা চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
এলাকাবাসী আরও জানান, সোমবার সোহেল চেয়ারম্যান পরিষদে থাকার সময় আরব আলীর নেতৃত্বে একদল লোক লাঠিসোটা নিয়ে পরিষদে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় এলাকাবাসী ও চেয়ারম্যানের সমর্থকরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে পিরিজপুর বাজারের ওপর অবস্থান নেন। ঘটনার পর সোহেল চেয়ারম্যান সোমবার রাতে গোদাগাড়ী থানায় নিজের ও পরিষদের সহায় সম্পদের নিরাপত্তা চেয়ে একটি আবেদন করেন।
গত মঙ্গলবার সকালে চেয়ারম্যান পরিষদে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ নেতা আরব আলীর নেতৃত্বে একদল যুবক পিরিজপুর এলাকায় তার পথ অবরোধ করেন। তারা প্রকাশ্যে লাঠিসোটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে দুপুর পর্যন্ত সড়ক ঘিরে রাখেন। ফলে চেয়ারম্যান পরিষদে যেতে পারেননি। তিনি পুনরায় পুলিশসহ জেলা প্রশাসকের কাছে নিজের ও পরিষদের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।
তবে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আরব আলী ছাত্রলীগের নামে যে অপকর্ম করছেস তাতে সরকারেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মাটিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, এমপি সাহেব আমাদের মাদক ব্যবসায়ী বলে গালাগাল করেন। কিন্তু যারা আমার পথরোধ করছে তাদের অধিকাংশই চাঁদাবাজ ও মাদকাসক্ত। তারাই এখন এমপির কাছের লোক। ছাত্রলীগের নামে তারা নানান অপকর্ম করে চললেও তাদের কারোরই কোনো পদ নেই। কারণ গোদাগাড়ীতে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। এমপির বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেওয়াই হচ্ছে তাদের অন্যতম কাজ। এদের কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
চেয়ারম্যানের পথ অবরোধের অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরব আলী বলেন, সোহেল চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়েছেন। এমপি সাহেবের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লিখেছেন। আমরা এ কারণেই তার পথরোধ করছি। আমরা তাকে পরিষদে বসতে দেব না। এ পথে আসলে আমরা তাকে বাধা দেব।
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্যাডার লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম্বারে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি কল ধরেননি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি উত্তেজনাকর থাকলেও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।