ঢাকা ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে ঝুঁকিপূর্ন ৫টি মার্কেট যে কোন সময় ঘটতে পারে অগ্নিকান্ড

মার্কেটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে আরডিএ মার্কেট

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে রাজশাহীর পাঁচটি মার্কেট। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মার্কেটগুলোর সামনে সতর্কতামূলক ব্যানার টানানো হলেও রাতারাতি তা উধাও হয়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

মার্কেট পাঁচটি হলো- নগরীর সাহেব বাজার এলাকার আরডিএ মার্কেট, সমবায় মার্কেট ও কাপড়পট্টি এবং নগরীর ষষ্টিতলা এলাকার  নিউমার্কেট, হড়গ্রাম নিউমার্কেট। এরমধ্যে আরডিএ মার্কেট হলো রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) মালিকানাধীন। সমবায় মার্কেটটি সমবায় বিভাগের। আর কাপড়পট্টি গড়ে উঠেছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের দোকানপাট নিয়ে। এছাড়া রাজশাহী নিউমার্কেট ও হড়গ্রাম নিউমার্কেট রাজশাহী সিটি করপোরেশনের।

এ পাঁচ মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হবে বলে জানিয়েছে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস। আশপাশে পানির উৎস না থাকার কারণে মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মার্কেটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে আরডিএ মার্কেট। ঘিঞ্জি এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার উপায়ও নেই।

সাহেববাজার এলাকার সড়কটি সম্প্রসারণের সময় ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে ১৯৯০ সালে আরডিএ মার্কেটে পুনর্বাসিত করে। তিনতলা এই মার্কেটে ১ হাজার ৯৫২টি দোকান রয়েছে। এই মার্কেটের তিনপাশেই সরু রাস্তা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার কোন উপায় নেই। সামনে প্রশস্ত রাস্তা থাকলেও প্রধান ফটকের কারণে মার্কেটের ভেতরে গাড়ি ঢুকতে পারবে না। মার্কেটটিতে মুদি দোকান, খাবারের হোটেল, কাপড়, কসমেটিক্স থেকে ক্রোকারিজ ও ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানও রয়েছে। ফলে মার্কেটটিতে অগ্নিকাণ্ডের চরম ঝুঁকি রয়েছে।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আরডিএ মার্কেটের ভিতরে ক্রেতাদের ভিড়।

গত ৮ জানুয়ারি রাতে মার্কেটের প্রধান ফটক সংলগ্ন বাইরের অংশে একটি মুদি দোকানের দোতলার গুদামে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রধান সড়ক থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই আগুন মূল মার্কেটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং বহু মানুষের হতাহতের আশঙ্কা ছিল।

অগ্নিকাণ্ডের চরম ঝুঁকি থাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কয়েক বছর আগেই আরডিএ মার্কেট ভেঙে ফেলতে সুপারিশ করে। তবে মার্কেটটি এখনও ভাঙা হয়নি। এই মার্কেটে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কেনাকাটা করেন। ঈদের সময় মার্কেটের ভেতরে পা ফেলার জায়গা থাকে না।

সবশেষ গত বছরের ১৭ এপ্রিল আরডিএ মার্কেট, সমবায় মার্কেট ও সাহেববাজার কাপড়পট্টি, রাজশাহী নিউমার্কেট, হড়গ্রাম নিউমার্কেটকে অগ্নিনিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে এই মার্কেট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।’ এছাড়াও সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করার পাশাপাশি প্রচারপত্রও বিতরণ করা হয়।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আরডিএ মার্কেটের প্রধান ফটক।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণের তেমন ব্যবস্থা নেই। আমরা এ বিষয়ে বারবার চিঠি দিলেও মার্কেট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আরডিএ মার্কেটের আশপাশে পুকুর নেই। ফলে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে পানির অভাবে আগুন নেভাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, ‘এই মার্কেটগুলোর সিঁড়িতেও মালামাল রাখা হয়। ফলে আগুনের ঘটনা ঘটলে মানুষ সহজে নামতে পারবেন না। আরডিএ মাকের্টের ভেতরে এলোমেলোভাবে বৈদ্যুতিক তার রয়েছে। ফলে সহজেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব কারণে মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।’

আরডিএর চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, ‘মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি আমরা প্রায় ২০০টি ফায়ার এক্সট্রিংগুইসার দিয়েছি। পাশ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন আছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের সতর্কতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ চলমান। মার্কেটটা ভাঙার পরিকল্পনা আছে। সেটা নিয়েও কাজ চলছে।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘অনেকেই দোকান বরাদ্দ নিয়ে অন্য ব্যবসা শুরু করেন। অবকাঠামোর আকৃতিও পরিবর্তন করে দেন। এক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, হড়গ্রাম নিউমার্কেট ঝুঁকিপুর্ন হতে পারে। তবে আমার কাছে রাজশাহী নিউমার্কেটকে খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় না। এর তিন দিকে বড় রাস্তা আছে। ভবনও মাত্র দোতলার। তারপরও সেটাকে ভেঙে অত্যাধুনিক মার্কেট করার পরিকল্পনা আছে।

 

আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

বান্দরবানকে স্মার্ট পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে: ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।

রাজশাহীতে ঝুঁকিপূর্ন ৫টি মার্কেট যে কোন সময় ঘটতে পারে অগ্নিকান্ড

আপডেট সময় ০২:৩৩:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে রাজশাহীর পাঁচটি মার্কেট। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মার্কেটগুলোর সামনে সতর্কতামূলক ব্যানার টানানো হলেও রাতারাতি তা উধাও হয়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

মার্কেট পাঁচটি হলো- নগরীর সাহেব বাজার এলাকার আরডিএ মার্কেট, সমবায় মার্কেট ও কাপড়পট্টি এবং নগরীর ষষ্টিতলা এলাকার  নিউমার্কেট, হড়গ্রাম নিউমার্কেট। এরমধ্যে আরডিএ মার্কেট হলো রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) মালিকানাধীন। সমবায় মার্কেটটি সমবায় বিভাগের। আর কাপড়পট্টি গড়ে উঠেছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের দোকানপাট নিয়ে। এছাড়া রাজশাহী নিউমার্কেট ও হড়গ্রাম নিউমার্কেট রাজশাহী সিটি করপোরেশনের।

এ পাঁচ মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হবে বলে জানিয়েছে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস। আশপাশে পানির উৎস না থাকার কারণে মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মার্কেটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে আরডিএ মার্কেট। ঘিঞ্জি এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার উপায়ও নেই।

সাহেববাজার এলাকার সড়কটি সম্প্রসারণের সময় ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে ১৯৯০ সালে আরডিএ মার্কেটে পুনর্বাসিত করে। তিনতলা এই মার্কেটে ১ হাজার ৯৫২টি দোকান রয়েছে। এই মার্কেটের তিনপাশেই সরু রাস্তা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার কোন উপায় নেই। সামনে প্রশস্ত রাস্তা থাকলেও প্রধান ফটকের কারণে মার্কেটের ভেতরে গাড়ি ঢুকতে পারবে না। মার্কেটটিতে মুদি দোকান, খাবারের হোটেল, কাপড়, কসমেটিক্স থেকে ক্রোকারিজ ও ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানও রয়েছে। ফলে মার্কেটটিতে অগ্নিকাণ্ডের চরম ঝুঁকি রয়েছে।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আরডিএ মার্কেটের ভিতরে ক্রেতাদের ভিড়।

গত ৮ জানুয়ারি রাতে মার্কেটের প্রধান ফটক সংলগ্ন বাইরের অংশে একটি মুদি দোকানের দোতলার গুদামে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রধান সড়ক থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই আগুন মূল মার্কেটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং বহু মানুষের হতাহতের আশঙ্কা ছিল।

অগ্নিকাণ্ডের চরম ঝুঁকি থাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কয়েক বছর আগেই আরডিএ মার্কেট ভেঙে ফেলতে সুপারিশ করে। তবে মার্কেটটি এখনও ভাঙা হয়নি। এই মার্কেটে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কেনাকাটা করেন। ঈদের সময় মার্কেটের ভেতরে পা ফেলার জায়গা থাকে না।

সবশেষ গত বছরের ১৭ এপ্রিল আরডিএ মার্কেট, সমবায় মার্কেট ও সাহেববাজার কাপড়পট্টি, রাজশাহী নিউমার্কেট, হড়গ্রাম নিউমার্কেটকে অগ্নিনিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে এই মার্কেট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।’ এছাড়াও সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করার পাশাপাশি প্রচারপত্রও বিতরণ করা হয়।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আরডিএ মার্কেটের প্রধান ফটক।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণের তেমন ব্যবস্থা নেই। আমরা এ বিষয়ে বারবার চিঠি দিলেও মার্কেট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আরডিএ মার্কেটের আশপাশে পুকুর নেই। ফলে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে পানির অভাবে আগুন নেভাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, ‘এই মার্কেটগুলোর সিঁড়িতেও মালামাল রাখা হয়। ফলে আগুনের ঘটনা ঘটলে মানুষ সহজে নামতে পারবেন না। আরডিএ মাকের্টের ভেতরে এলোমেলোভাবে বৈদ্যুতিক তার রয়েছে। ফলে সহজেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব কারণে মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।’

আরডিএর চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, ‘মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি আমরা প্রায় ২০০টি ফায়ার এক্সট্রিংগুইসার দিয়েছি। পাশ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন আছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব সতর্কতা অবলম্বনের জন্য আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের সতর্কতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ চলমান। মার্কেটটা ভাঙার পরিকল্পনা আছে। সেটা নিয়েও কাজ চলছে।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘অনেকেই দোকান বরাদ্দ নিয়ে অন্য ব্যবসা শুরু করেন। অবকাঠামোর আকৃতিও পরিবর্তন করে দেন। এক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, হড়গ্রাম নিউমার্কেট ঝুঁকিপুর্ন হতে পারে। তবে আমার কাছে রাজশাহী নিউমার্কেটকে খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় না। এর তিন দিকে বড় রাস্তা আছে। ভবনও মাত্র দোতলার। তারপরও সেটাকে ভেঙে অত্যাধুনিক মার্কেট করার পরিকল্পনা আছে।