![](https://www.nababani.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
বুধবার (৮ নভেম্বর) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর উদ্যোগে জাতীয় চার নেতা স্মরণানুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এই স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্মরণানুষ্ঠানে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এর জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ রিপি, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কন্যা ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর দৌহিত্র প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বক্তব্য দেন।
স্মরণানুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী। সমাপনী বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন সঞ্চালনা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম। শ্রদ্ধাঞ্জলি সংগীত পরিবেশনা করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম। আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বঙ্গবন্ধুর কথা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ও মানুষকে সংগঠিত করতে গ্রামে-গঞ্জে ছুটে বেড়াতেন জাতীয় চার নেতা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি কতটা দৃঢ় সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ থাকলে, কত গভীর দেশপ্রেম থাকলে, কতটুকু মনের শক্তি থাকলে তারা নিশ্চিত মৃত্যু মুখে দাঁড়িয়েও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেন। যে জাতীয় চার নেতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে দেশকে স্বাধীন করেছেন, তাদের সম্পর্কে ফলাও করে প্রচার হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে পারে।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিচক্র একটি কিলার টিম গঠন করেছিল। সেই কিলার টিমের প্রতি নির্দেশ ছিল তাদের বিপক্ষে কোন কিছু ঘটলে নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে যেন কারাগারে গিয়ে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। সেটিই হয়েছে। ৩রা নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর-এই সময়ের মধ্যে এতোকিছু ঘটনা বাংলাদেশের মাটিতে ঘটেছে। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র, পাল্টা ষড়যন্ত্র, নানা কিছু ঘটেছে। ২ নভেম্বর রাত থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে কী কী ঘটেছে, সেগুলো নিয়ে গবেষণামূলক বিস্তারিত লেখা আসা দরকার।
তিনি আরো বলেন, ২২ আগস্ট জাতীয় চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমার মা খাবার নিয়ে বাবার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে যেতেন। আমার পিতা মাকে বলেছিলেন, ‘আমরা বোধহয় আর জীবিত এখান থেকে বের হতে পারবো না। মোস্তাক আমাদের জীবিত ছেড়ে দেবে না। আমার চারটি মেয়ে, আমি কারো বিয়ে দিতে পারলাম না। তুমি তাদের ব্যবস্থা করো।’ এমন কথা মানুষ কখন বলে? এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় চার নেতা নিশ্চিত মৃত্যু জেনে মৃত্যুকেই গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেঈমানি করেননি।
রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা চড়াই-উৎরায় পেরিয়ে সমস্যা-সংকটের মধ্য দিয়ে দেশকে সুন্দর জায়গায় নিয়ে গেছেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরো এগিয়ে যাবে। সে সময় যে ঘটনাগুলো ঘটছে, যারা আমাদের নানা দোষে দুষ্ট করার চেষ্টা করছে। তাদের মুখে সে কথাগুলো কি আদৌ মানায়? যে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, যে দল হুন্ডা-গুন্ডা দিয়ে, মান্তান দিয়ে নির্বাচন করে, হ্যা/না ভোটে কারচুপি করে, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে একটা নারকীয় পরিবেশ তৈরি করেছিল, সেই দলের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্র শিখতে হবে?
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এর জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ রিপি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট ১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা, ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কন্যা ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে আমার পিতা বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী হিসেবে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জয় বাংলা পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিলো ‘সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংকট মানব।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট আমরা গৃহবন্দী হয়ে যাই। আমার আব্বার লাল টেলিফোনে একটি ফোন আসলো, উনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর দিয়ে আমি ক্ষমতার মসনদে কোনদিনই যাবো না। পরে জানতে পারলাম সেটি খুনী খন্দকার মোশতাকের ফোন ছিলো। আমার আম্মার কাছেও ফোন আসে তিনিও বাবার মতো অবিচল ছিলেন।
শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর দৌহিত্র ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ও ৩রা নভেম্বর থেকে একের পর এক চড়াও উৎরাই পেরিয়ে আজকের বাংলাদেশ। খুনিদের রায় হয়েছে কিন্তু শাস্তি কার্যকর হয়নি। পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে জোরালো আন্দোলন করতে হবে। দ্রুত বিচারের রায় কার্যকর করার দাবি জানাই।
সমাপনী বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, ইতিহাস কখনোই মুছে যেতে পারে না। জিয়াউর রহমান ইতিহাস বিকৃতির বহু চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইতিহাস তার নিজের গতিতেই চলে। আগামীতে আরও বৃহত্তাকারে জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করা হবে সেই প্রত্যাশা করি। আগামী মার্চ মাসে জাতীয় চার নেতাকে একটি কর্ণার তৈরি করা হবে।#